Featured

শরঈ দৃষ্টিতে ইমারত ও শূরাইয়াতের একটি তুলনামূলক আলোচনা

শরঈ দৃষ্টিতে ইমারত ও শূরাইয়াতের একটি তুলনামূলক আলোচনা

আমাদের সকল কাজের জন্য দলিল থাকা সবচেয়ে বেশি জরুরি। যদি দলিল না থাকে তাহলে তা বাতিল হয়ে যায়, কবুল হয় না। দলিল ছাড়া যে কোন কিছু আপনি সহীহ মনে করলেও তা বাতিল। কেননা এর কোন দলিল নেই, সুন্নত দ্বারা প্রমাণিত নয়। একথা তো শুরু থেকেই চলে আসছে যে, এই দাওয়াতের কাজ রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেয়া জিম্মাদারীর ভিত্তিতে তাঁরই অনুসরণে চলে আসছে। এ কথা নতুন পুরাতন সকলেই,চাই তিনিকাজের সাথে এখনো লেগে থাকুন বা না থাকুন, সকলে এ কথাই বলছেন।

একাজ রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিয়াবতের এবং চলবে তাঁরই অনুসরণে। খতমে নবুওয়াতের তোফায়েলে আল্লাহতায়ালা এই কাজ দিয়েছেন। এ কাজের সব দলিল সুন্নত, শরীয়ত ও সীরাত দ্বারা প্রমাণিত। এর গাস্ত নবীওয়ালা গাস্ত, খুরুজ নবীওয়ালা খুরুজ৷ সব কাজের ব্যাপারেই দলিল রয়েছে। মাশোয়ারার ব্যাপারেও দলিল রয়েছে। কুরআনে কারীমে আল্লাহ তায়ালা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হুকুম দিয়েছেন মাশোয়ারা করার জন্য। এখানে দলিল পরিষ্কার যে, একজনই ফয়সাল থাকবেন যিনি সকলের সাথে মাশোয়ারা করবেন, মাশোয়ারার সকল সাথীদের থেকে রায় নিতে পারেন। তাঁরাই হলেন শূরা যারা সকলে এক আমীরকে রায় দিতে পারেন। ‘আমীর’ তো এভাবেই এসেছে।একথা কিভাবে বলা যেতে পারে যে, ইমারত আসল নয়, শূরাইয়াত আসল। আমি পেরেশান হই যে, লোকজনদলিল চায় যে ইমারত আসল নাকি শূরাইয়াত আসল। শূরাদের সাথে মাশোয়ারা করার কথা অস্বীকার করা যায় না। মাশোয়ারা সকল শূরাদের থেকে নেয়া যাবে। কিন্তু ফয়সাল বা আমীর একজন হবেন।

এভাবেই কাজ হয়ে আসছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরে আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহু আমীর। কত মুহাজির এবং আনসারগণ ছিলেন। এমন একটি প্রস্তাব এসেছিল যে, একজন আমীর মুহাজির থেকে হবে, আরেক জন আনসারদের থেকে হবেন। হযরত উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু বললেন, এক খাপে দুই তলোয়ার থাকে না।

সকলের কথা শুনেই আমি এ কথা বলার জন্য বসেছি। বুখারী শরীফের ‘বাবুল ইমারত’ দেখুন। বুখারী শরীফের সকল দলিল আমার সামনে রয়েছে। মাজাহেরে হক্ব ও মিশকাত শরীফ রয়েছে। ইমারতের উপরে অনেক বুনিয়াদী কথা মজুদ রয়েছে। সবচেয়ে বড় দলিল তো এটাই, রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নিজের আমীরের ইত্ব’আত কর। যে আমীরের ইত্ব’আত করে সে আমারই ইত্ব’আত করে। যে আমীরের বিরোধিতা করে সে আমার বিরোধিতা করে। এর উপরে মাজাহেরে হকে একটা চ্যাপ্টারই কায়েম করা হয়েছে। মাজাহেরে হক্ব পৃষ্ঠা ৪১৪। ‘আমীরের ইত্ব’আত আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের ইত্ব’আত।’ 
আবু হুরাইরাহ রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে এই হাদীস বুখারী এবং মুসলিম শরীফে সংকলন করা হয়েছে। “যে আমার আনুগত্য করে সে আল্লাহর আনুগত্য করে, যে আমার নাফরমানী করে সে আল্লাহর নাফরমানী করে। সে তাঁর আমীর বা সর্দারের আনুগত্য করে সে আমার আনুগত্য করে। যে আমীরের নাফরমানী করে সে আমার নাফরমানী করে। যে আমার নাফরমানী করে সে আল্লাহর নাফরমানী করে।” এখানে ইমারতের কথা বলা হচ্ছে! আমি অনেক খুঁজেছি যে এমন কোন হাদীস পাই কিনা যে কোথাও বলা হয়েছে তুমি সকলের সাথে মাশোয়ারা করে তাঁদের আনুগত্য কর, অর্থাৎ শূরার আনুগত্য কর। কোথাও পাওয়া যায় কিনা এমন কিছু আমাকে একটু খুঁজে দিন।

অনেকে আমাকে ফোন করে, জিজ্ঞেস করে যে, কি দলিল, কি প্রমাণ। কমপক্ষে হাদীস তো খুলে দেখুন! উলামায়ে কেরামের কাছে জিজ্ঞেস করুন! না না সব নেজাম শূরাই!! আমি কবে অস্বীকার করেছি যে মাশোয়ারা শূরা ছাড়া হবে! মাশোয়ারা শূরাদের সাথেই হবে। তা তো নিযামুদ্দিনে ইতিমধ্যেই বানানো হয়েছে। ৮ জনকে নিয়ে শূরা বানানো হয়েছে। তা এখনো বহাল আছে। কিন্তু এখন অস্বীকার করা হচ্ছে যে, না এর উপর ইমারত চলবে না।

এ ব্যাপারে ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুমার বর্ণনা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কেউ যদি তাঁর আমীরের বিষয়ে এমন কিছু দেখে যা সে শারায়ান এবং ত্বাবাআন (শরয়ী দিক দিয়েও স্বভাবগতভাবে; দুই কথাই এসেছে, একটু চিন্তা করা দরকার) পছন্দ না হয়, তাঁকে এর উপরে সবর করা উচিত। এবং এ কারণে আমীরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ঝাণ্ডা উত্তোলন করা উচিত নয়। কেননা কেউ যদি এক বিঘত পরিমাণও জামাত থেকে বিচ্ছিন্ন হয় এবং তওবা করা ছাড়া এভাবেই মারা যায়, তাহলে তাঁর মউত জাহেলিয়াতের(গোমরাহী) উপরে হবে।

আমীরের বিরোধিতা করে যারা মারা যায়, তাঁদের মৃত্যু জাহেলিয়াতের উপরে হবে। যদিও আমীর কালো হাবশী গোলাম হয় তবুও তাঁর আনুগত্য করতে হবে। শুধু এক জায়গায় নাফরমানীর (না মানার)অনুমতি আছে,যেখানে আমীর স্পষ্টভাবে কুফরের হুকুম দেয়।
মুসলিম শরীফের আরেক রেওয়ায়েত,যদি কেউ আমীরের মুখালেফাত করে মুসলমানদের ঐক্য নষ্ট করে বিভক্তি সৃষ্টি করে তাঁর গর্দান উড়িয়ে দাও। উম্মতের ঐক্য বিনষ্ট করার অনুমতি নেই।

দলিল মজুদ আছে। আমাকে একটি দলিল দেখান, যেখানে বলা হয়েছে আমীরের ইত্ব’আত নয় বরং একটি জামাতের ইত্ব’আত কর। আমি কারো উপরে আঙ্গুল তুলছি না, আমি দলিল চাচ্ছি। (শূরাপন্থীদের তরফ থেকে) বারবার আমার কাছে ফোন আসে, বারবার জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে। কেউ কেউ ধমকও দিচ্ছেন। আমি তাজ্জব হয়ে যাচ্ছি। দলিল তো নেই। এখন দলিল বানিয়ে তাঁদের দিতে হবে! যে দলিল দিতে পারছে না তাঁদের জলিল (অপমানিত) করার চেষ্টা করছে!
সব হাদীসেই দলিল মজুদ আছে। বুখারী দেখুন, মুসলিম দেখুন, তিরমিযী দেখুন, আবু দাউদ দেখুন। সকল কিতাবে ইমারতের উপরে অধ্যায় কায়েম করা হয়েছে। উম্মতকে বিগড়াবেন না! উম্মতকে কি দিচ্ছেন? এ ব্যাপারে একটু চিন্তা করা দরকার। আপনারা সকলেই একথা ভালো ভাবে স্মরণ রাখবেন। আমি এজন্যই এ কথা বলছি, যে এটা আওয়ামদের হক্ব। আমাদের জিজ্ঞাসা করা হবে যে, যে উম্মতকে কি দিয়েছ? এজন্য এটা আমার জিম্মাদারী।

এটা কোন ব্যক্তিপূজা নয়। সব জামানাতেই আমীরের ইত্ব’আত হয়ে এসেছে। আজ এই হযরত আছেন। যখন না থাকবেন তখনও আমীরের ইত্ব’আত হবে, ইনশাআল্লাহ। এজন্য আরজ করছি, সকল হাদীসেই মজুদ আছে। হাওয়ালা দিচ্ছি, মাজাহেরে হক্ব। মেশকাত শরীফের হাদীস। দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে এই শরাহ লেখা হয়েছে। নিজে থেকে কোন তরজমা করিনি।এখানে অধ্যায়ের নামই দেয়া হয়েছে দেখুন, ‘আমীরের ইত্ব’আত আল্লাহর রসূলের ইত্ব’আত’। যে আমীরকে মানে না সে আল্লাহকে মানে না, রসূলকেও মানে না। (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।) ঠিকানা কোথায় হবে? জাহেলিয়াতের মউত মরবে। চাই সে যত বড় ইলমের পাহাড়ই হোক।

এ কারণে বড়রা তো কোন বিরোধিতা করছেন না। এই কিছু ছোট ছোট চুনোপুঁটি তারা আপোষে ঐক্য বিনষ্ট করছে। এজন্য দলীলের উপরে কথা হওয়া চাই। এবং এটা সব সময়ে চলবে। সব সময়েই আমীর থাকবে শূরাদের উপরে। যাঁরা আছে তাঁদের মধ্যে একজন আমীর বানিয়ে নিন। উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু ছয় জনের একটি শূরা বানিয়েছিলেন। এরপর তিনি কি বলেছিলেন? আজ অনেকে দলিল দেয় যে হযরত উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু শূরা বানিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু বানানোর পরে কি বলেছিলেন? “এই ছয় জন নির্ধারণ করে দিলাম, এদের থেকে একজন আমীর বানিয়ে নাও। যদিতিন জন তিনজন মতপার্থক্য হয়ে যায়, তাহলে দেখ, আব্দুর রহমান ইবনে আওফের রায় কি? (রাযিয়াল্লাহু আনহু।) তাঁর রায় গ্রহণ করে নাও।” এরই ভিত্তিতে হযরত উসমান রাযিয়াল্লাহু আনহুকে আমীর বানানো হয়েছিল। যখন উসমান রাযিয়াল্লাহু আনহুর শাহদাত হয়ে গেল, আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রাযিয়াল্লাহু আনহু ফায়সাল হিসেবে জীবিত ছিলেন? বাকী ছয়জনের মধ্যে কে জীবিত ছিলেন? হযরত আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু। তাঁকে কোন মাশোয়ারায় আমীর বানানো হয়েছিল যে, বলা হচ্ছে অমুক বিনা মাশোয়ারায় আমীর হয়ে গেছেন!

শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহির এক কিতাবে খেলাফতের আলাদা একটা অধ্যায়ই আছে। দাওয়াতের কাজের সকল কিছু সীরাত দ্বারা প্রমাণিত নয় কি? এই সকল হাদীসই সীরাতের অন্তর্ভুক্ত। এ কথা বলা যাবে না যে, এই ইমারত তো অন্য কোন মাসাআলা। এটা এই দাওয়াতের কাজ এবং আলমী মেহনতের জন্যই। কেমন কথা যে, বলবেন দাওয়াতের কাজ সীরাত দ্বারা সাবিত করা হোক, আর ইমারতের হাদীস সামনে এসে গেলে বলবেন যে, না এটা তো অন্য কোন বিষয়ের হাদীস। তাহলেকি ব্যপারটা এমনই হল না যে, যা পছন্দ হয় তাই নিব, আর যা নফসের চাহিদার খেলাপ হয় তা অস্বীকার করব! কি আজব কথাবার্তা হচ্ছে! ইমারত এভাবেই চলে এসেছে। কারো পছন্দ হোক বা না হোক, এটাই হুকুম। কেউ না চাইলেও তাঁকে ইমারতের উপরে উঠতে হবে। সাহাবাকেরাম এর উপরে বায়াআত হয়েছেন। যদিও (আমীর) আমাদের মধ্যে থেকে না হোক।

এই লোকগুলো হায়াতুস সাহাবার দরস দিয়েছেন জিন্দেগী ভরে। তবুও দেখে না কেন? তোমাদের মধ্যে থেকে না হোক তবুও (আমীরের) ইত্ব’আত কর।
এজন্য আপনাদের নিকট আরজ করছি, আপনারা এই দলীলের উপরে গভীর ভাবে চিন্তাভাবনা করুন এবং আপন আপন উলামায়ে কেরামের নিকট জিজ্ঞাসা করি, হাদীসে কি ইমারতের উপরে ইত্ব’আত নাকি অন্য কোন কিছুর ইত্ব’আতের হুকুম দেয়া হয়েছে?
নিজের আমীরের ইত্ব’আত করতে থাক, বিরোধিতা কর না, উম্মতের ঐক্য নষ্ট কর না।
وَلاَتُفْسِدُواْفِيالأَرْضِبَعْدَإِصْلاَحِهَا
জমিনকে সংশোধন করার করার পর তাতে ফাসা’দ সৃষ্টি করো না। [সূরা আরাফঃ ৫৬]

ইসলাহের পরে আবার ফাসাদ! আল্লাহর কাছে আমাকেও জবাব দিতে হবে, অন্য সবাইকেও দিতে হবে। আল্লাহরাব্বুল ইজ্জাত সহীহ সমঝ দান করুন, আল্লাহতায়ালার সামনে আমার আপনার এবং সকল শ্রোতাদের কারগুজারী দিতে হবে। তাই দিয়ানাতদারীর সাথে আল্লাহর ওয়াস্তে বলছি, আমাদের এই বুযুর্গগণ অনেক বড় মাপের। উম্মতের খাতিরে ইমাম হাসান রাযিয়াল্লাহু আনহুর আমল দেখুন, উম্মতের মধ্যে ইখতিলাফ খতম করার জন্য তিনি পিছে হটে গিয়েছিলেন। অথচ এখানে ইখতিলাফ পয়দা করার জন্য ইখতিলাফকে আগে বাড়ানোহচ্ছে। এটা উম্মতকে কি দিবে?

এজন্য আমি আরজ করছি, আল্লাহর ওয়াস্তে সকল ফয়সালা কুরআন, হাদীস, সুন্নত, শরীয়ত থেকে হওয়া চাই। যে আমার আমীরের আনুগত্য করে সে আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের আনুগত্য করে। যে আমীরের নাফরমানী করে… হাদীসে পড়েছি, দলিল মজুদ আছে। আপনাদের উলামায়ে কেরামের নিকট খুব ভালো ভাবে জিজ্ঞেস করুন। মিশকাত শরীফের ‘কিতাবুল ইমারত’। বুখারী মুসলিমের রেওয়ায়েত আছে। এই সকল জিনিসই দেখা জরুরি। আমরা কি করছি, আর উম্মতকে কি দিচ্ছি।

তাই দরখাস্ত করছি এগুলো দেখুন, শাহ ওয়ালীউল্লাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহির কিতাবে এসবই মজুদ আছে। আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু কিভাবে আমীর হলেন। তিনি কারো মাশোয়ারায় হননি। বরং উমররাযিয়াল্লাহু আনহুর ছয় জনের মধ্যে তিনিই উপযুক্ত রয়ে গিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে কারো ইখতিলাফ নেই। তাই সাথীরা আল্লাহর ওয়াস্তে উলামাদের জিজ্ঞেস করে নিন যে হাকিকত কি? আল্লাহ তায়ালা তাওফিক দিন।হিংসার জ্বলুনির বুনিয়াদে নিজের ব্যক্তিগত বিষয়ে জোরাজুরি করা এটা তো ইবলিস করেছিল। আমরা কেন তাকাব্বুর করছি? শয়তান বলেছিল, আমার সামনে এই আদম (আলাইহিস সালাম), এ তো নতুন; আমি তো পুরাতন, বেশি জানি! তাঁর আনুগত্য করব কেন? সেজদা কেন করব! সে (শয়তান) কোথায় পৌঁছে গেছে! আল্লাহ আমাদের এ থেকে হেফাজত করুন।

এজন্যই ইত্ব’আত জরুরি। শরীয়ত সম্পূর্ণতাই ইত্ব’আতের উপরে। যে ইত্ব’আত করতে থাকবে সে হেদায়েত পাবে। আল্লাহ তায়ালাসহীহ বুঝ দান করুন। আমি আল্লাহ তায়ালাকে বলব, হে আল্লাহ, আমি এই কথা পুরাপুরি আমানতদারীর সাথে পৌঁছিয়েছি। এর বিপরীত যদি কোন দলিল থাকে, অবশ্যই আমাকে জানাবেন। আমি সম্পূর্ণ কবুল করব ইনশাআল্লাহ।

আল্লাহ তায়ালা আমল করার তাওফিক দিন। আপনাদের অন্তরে যা আছে তার খারাবী থেকে আপনাদের হেফাজত করুন, উম্মতের মধ্যে চলমান অস্থিরতা খতম করুন।

*দাওয়াত ও তাবলীগের ইখতিলাফ নিরসনে*

*বরেণ্য উলামায়ে কেরামের উদ্যোগ ও দলিলপত্র*

Featured

বিভ্রান্তির কবলে মাওলানা আব্দুল মালেক সাহেব।

বিভ্রান্তির কবলে মাওলানা আব্দুল মালেক সাহেব (০২)

তিনি বলেন_
হযরত ওমর রা. তার পরের খলীফা কে হবেন তা ঠিক করে দিয়ে যাননি; বরং ছয় জনের একটি শূরা বানিয়ে দিয়েছেন। বলুন তো, এ শূরার আমীর কে ছিলেন? কেউ ছিল না। খলীফাতুল মুসলিমীন ঠিক করার মত এত গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য হযরত উমর রা. যে শূরা ঠিক করে দিয়েছেন সে শূরার কোনো আমীর ছিল না! ইতিহাস দেখুন! সে শূরার কোনো আমীরই ছিল না। ঐ শূরা কীভাবে ফায়সালা করবে তাও তিনি বলে গেছেন। সবাই যদি একমত হয়ে যান, তাহলে তো হল। নতুবা কীভাবে কী করবে সে পন্থাও তিনি বলে গেছেন। কিন্তু শূরার আমীর ঠিক করে দেননি। তাহলে যে বলা হয়, ‘আমীর বিহীন শূরার কোনো অস্তিত্ব নেই’- কে বলল? এত বড় গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য যে শূরা ঠিক করা হয়েছিল, সে শূরারই তো আমীর ছিল না।

(বানীতে মাওলানা আব্দুল মালেক)

জবাবঃ_

আমীর তো আল্লাহ’র রাসুল (সঃ) নিজেও বানিয়ে দিয়ে যাননি। তবে কি সাহাবায়ে কেরাম (রা:) গন একক আমীর নির্বাচন করেন নি ? তখন আনসারগনের একজন প্রস্তাব করেছিলেন যে, খেলাফতের আমীর দুজন হবে যেমনটি আপনারা দাবী করছেন। কিন্তু সেই প্রস্তাব কেন গৃহীত হলো না ? হযরত ওমর ফারুখ (রাঃ) একিভাবে তার গঠিত শুরা কমিটির কোন আমীর বানাননি। পরে শুরা কমিটি নিজেদের মধ্যে একজনকে জিম্মাদার বানিয়ে পরামর্শক্রমে হযরত ওসমান (রাঃ) কে আমীর নির্বাচন করেন। এতেকি আমীর বহীন শুরাইজমের প্রমান মিলে, নাকি একক আমীরের ?

হযরত ওমর ফারুক (রা:) যে তত্বাবদায়ক শুরা কমিটি বানিয়েছেন তা কি খেলাফত চালানোর জন্য নাকি আমীর নির্বাচনের জন্য ?

@শুরা ব্যবস্থা দু প্রকারঃ

১) তত্বাবদায়ক শুরা কমিটি
২) আমীরের আহলে শুরা

** ‘তত্বাবদায় শুরা কমিটি’ দায়িত্ব আমীর নির্বাচনের মধ্যে সীমাবদ্ধ।

*** “আহলে শুরা” হলো যারা আমীরের খেলাফতের/ দাওয়াতের কাজে সাহায্য ও পরামর্শ প্রদান করেন।

দাওয়াতে ইলাল্লাহ’র কাম পুরা উম্মতের কাম। এটা নির্দিষ্ট কোন দলের কাম নয়। ” বাল্লিগু আন্নি ওলাউ আয়াহ” – এ কথার মধ্যে উম্মতের আওয়াম-আলেম প্রত্যেকেই শামিল। জনাব আব্দুল মালেক সাহেব বার বার দাওয়াতের কামকে একটি দ্বীনি জামাত বা দল বা দ্বীনের শাখা বা শোভা হিসেবে উপস্থাপন করে উম্মতকে গোমরাহ করার অপচেষ্টায় রত। অথচ দাওয়াতে ইলাল্লাহ’র কাম পুরা উম্মতের কাম। এটা কোন দলের কাম নয়।
উম্মাত কা রাহবারি

Be yourself; Everyone else is already taken.

— Oscar Wilde.

This is the first post on my new blog. I’m just getting this new blog going, so stay tuned for more. Subscribe below to get notified when I post new updates.

“যমযম-এর পানি কি দাঁড়িয়ে পান করতে হয়?”

“যমযম-এর পানি কি দাঁড়িয়ে পান করতে হয়?”

কিছুক্ষণ আগে ইসলামি ব্যাংক, কক্সবাজার শাখায় দেখলাম একজন ভাই অফিসের বাকি স্টাফদের যমযমের পানি পান করাচ্ছেন। কোনো একজনও বসে পান করেন নি; বরং গড়পড়তা সবাই দাঁড়িয়েই পানি পান করলেন!

হাদিসে এই ব্যাপারে অকাট্য দলিল থাকা সত্ত্বেও প্রচলিত মনগড়া কথাটি এতটা প্রসিদ্ধি লাভ করেছে যে- শতভাগ সবাই হাদিসের নিষেধাজ্ঞা সম্মান মনে করেই করে বসলেন!

দাঁড়িয়ে পানি পান না করার জন্য হাদিসে কঠোরভাবে বারণ করা হয়েছে। এমনকি, দাঁড়িয়ে পানি পান করলে তাকে বমি করে বের করে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
☞ মুসলিম: হা. নং-২০২৫-২৬,
☞ তিরমিযি: হা. নং-১৮৮০,
☞ মুসলিম: হা. নং- ২০২৪,
☞ আবূ দাউদ: হা. নং- ৩৭১৭,
☞ তিরমিযি: হা. নং- ১৮৭৯,
☞ আহমাদ: হা. নং- ১১৭৭৫, ১১৯২৯, ১২০৮১, ১২৪৬০, ১২৬৪৯, ১৩২০৬, ১৩৫৩১, ১৩৬৯১,
☞ দারেমি: হা. নং- ২১২৭,
☞ সহিহাহ: হা. নং- ১৭৭,
☞ ইবনে মাজাহ: হা. নং- ৩৪২৪।

শুধু তা নয়: দাড়িয়ে ঝুলন্ত মশক থেকে পানি পান করার ফলে মশকের মুখ কেটে ফেলেছিলেন এক সাহাবী!
☞ শামায়েলে তিরমিযি: হা. নং- ১৫৯, ১৫৭,
☞ মুসনাদে আহমাদ: হা. নং-২৭৪৬৮,
☞ মুজামুল কাবীর লিত তাবারানী: হা. নং- ২০৮১৫,
☞ শারহুস সুন্নাহ: হা. নং- ৩০৪২,
☞ শু’আবুল ঈমান: হা. নং- ৫৬২৪

এবার আসুন, যমযমের পানি আমরা কেন দাঁড়িয়ে পান করি?
অধিকাংশের উত্তর হবে, হাদিসে রয়েছে।
জি, রাসুল (সা.) যমযেমের পানি দাঁড়িয়ে পান করতেন।

☞ বুখারি, হা. নং- ১৬৩৭; ৫৬১৭,
☞ মুসলিম, হা. নং- ৫৩৯৯; ৭১৭৭, ৫৪০০, ২০২৭,
☞ মুসনাদে আহমাদ: হা. ২৬০৮;
☞ ইবনে মাজাহ: হা. ৩৪২২,
☞ ইবনে হিব্বান: হা. নং- ৫৩২০;
☞ মুজামুস সাগীর: হা. নং- ৩৮৯;
☞ শারহুস সুন্নাহ, হা. নং- ৩০৪৬,
☞ শামায়েলে তিরমিযি: হা. নং- ১৫৪,
☞ মুসনাদে আহমাদ: হা. নং- ১৮৩৮;
☞ শু’আবুল ঈমান: হা. নং- ৫৫৮২,
☞ তিরমিযি: হা. নং- ১৮৮২,
☞ নাসায়ী: হা. নং- ২৯৬৪, ২৯৬৫,
☞ আহমাদ: হা. নং- ১৮৪১, ১৯০৬, ২১৮৪, ২২৪৪, ২৬০৩, ৩১৭৬, ৩৪৮৭, ৩৫১৭।

এখন আসুন, রাসুল (সা.) সাধারণ পানিও দাঁড়িয়ে পান করেছেন এবং সাহাবায়ে কেরামদের বেশিরভাগ জীবনে অসংখ্যবার সাধারণ পানি দাঁড়িয়ে পান করেছেন।

☞ বুখারি: হা. নং- ৫৬১৫, ৫৬১৬,
☞ নাসায়ি: হা. নং- ১৩০,
☞ আবূ দাউদ: হা. নং- ৩৭১৮,
☞ আহমাদ: হা. নং- ৫৮৪, ৯৭৯, ৯১৮ , ৯৭৩, ৯৭৯, ১০৪৯, ১১২৮, ১১৪৪, ১১৭৭, ১২০১, ১২২৭, ১৩৫৩, ১৩৭০,
☞ মুয়াত্তা ইমাম মালেক: হা. নং- ১৬৫৪;
☞ মুজামুল কাবীর লিত তাবারানী: হা. নং- ৩৩৭; ☞ শারহুল মা’আনী: হা. নং- ৬৮৪৮,
☞ নাসায়ী: হা. নং- ২৯৬৪।

তাহলে, যেই যুক্তিতে আমরা সাধারণ পানি দাঁড়িয়ে পান করিনা সেই একই যুক্তিতেও কিন্তু যমযমের পানিও দাঁড়িয়ে পান করা যাবেনা। ব্যাপারটি ঠিক এই জায়গায় যে- রাসুল (সা.) যমযমের পানি যেমন বসে বা দাঁড়িয়ে পান করেছেন তেমনি সাধারণ পানি-ও।
অথচ তিনি দাঁড়িয়ে পান না করতে নিষেধ করার সময় যমযম বা সাধারণ এভাবে কোনো তফাত করেন নি। তফাত আমরা-ই করে নিয়েছি নিজেদের ইচ্ছেমতো সম্মানের নাম করে অতি আবেগ-এ টইটুম্বুর হয়ে।

ফলে, আমরা সাধারণ পানি দাঁড়িয়ে পান করতে দেখলে তাকে পাথর মারতে ছুটি বাট যমযমের পানি বসে খেতে দেখলে দোররা মারি! এই মাথামোটা ধারণা ক্যামনে কীভাবে আমাদের মাথায় ডুকলো সেটাই ভেবে কুলকিনারা পায়না।

যমযম বা সাধারণ সব ধরণের পানি পানের বেলায় শরীয়তে একই হুকুম। অর্থাৎ দাঁড়িয়ে পান করা যাবেনা। সম্মানের নামে অতি আবেগ ধর্মের কোনো অংশ নয়। বরং রাসুল (সা.) এবং সাহাবারা যমযমের পানি স্বাভাবিকভাবে পান করতেন অন্যান্য পানির মতোই!

বুখারি: হা. নং- ১৫৫৭, ১৫৬৮, ১৫৭০, ১৬৫১, ১৭৮৫, ২৫০৬, ৪৩৫২, ৭২৩০, ৭৩৬৭,
☞ মুসলিম: হা. নং- ১২১৩, ১২১৫, ১২১৬/১-৫, ১২১৮/১-৩, ১২৬৩/১-২, ১২৭৩, ১২৭৯, ১২৯৯,
☞ তিরমিযি: হা. নং- ৮১৭, ৮৫৬-৫৭, ৮৬২, ৮৬৯, ৮৮৬, ৮৯৭, ৯৪৭, ২৯৬৭, ৩৭৮৬,
☞ নাসাঈ: হা. নং- ২১৪, ২৯১, ৩৯২, ৪২৯, ৬০৪, ২৭১২, ২৭৪০, ২৭৪৩-৪৪, ২৭৫৬, ২৭৬১-৬৩, ২৭৯৮, ২৮০৫, ২৮৭২, ২৯৩৯, ২৯৪৪, ২৯৬১, ২৯৬২-৬৩, ২৯৬৯-৭৫, ২৯৮১-৮৫, ২৯৯৪, ৩০২১-২২, ৩০৫৩-৫৪, ৩০৭৪-৭৬, ৪১১৯,
☞ আবু দাউদ: হা. নং- ১৭৮৫, ১৭৮৭-৮৯, ১৮১২, ১৮৮০, ১৮৯৫, ১৯০৫-৭, ১৯৪৪, ৩৯৬৯,
☞ আহমাদ: হা. নং- ১৩৭০২, ১৩৮০১, ১৩৮২৬, ১৩৮৬৭, ১৪০০৯, ১৪০৩১, ১৪১৬১, ১৪২৫০, ১৪৪৮৪, ১৪৫২৫, ১৪৫৮৯, ১৪৬২১, ১৪৬৬৭, ১৪৭৩৫, ১৪৮২১, ১৪৮৫১,
☞ মুয়াত্তা মালিক: হা. নং- ৮১৬, ৮৩৫-৩৬, ৮৪০,
☞ দারিমী: হা. নং- ১৮০৫, ১৮৪০, ১৮৫০, ১৮৯৯,
☞ ইরওয়া: হা. নং- ১১২০,
☞ সহিহ আবু দাউদ: হা. নং- ১৬৬৩।

সুতরাং কী বুঝলেন! দাঁড়িয়ে পান না করার নির্দেশ কী যমযমের পানির বাইরে অন্যান্য পানির জন্য? না। সব ধরণের পানির জন্যই, হোক সেটা যমযম বা সাধারণ পানি। আসুন সত্যটা জানি এবং মানি।
প্রসিদ্ধ শক্তিশালী মিথ্যা ডিলিট করি।

পৃথিবী অক্ষের বিপরিতে আসা ধ্বংসাত্মক ইলেকট্রন

মাস্তুরাত এর বয়ান, [মাও: ইয়াকুব সিলোনি সাহেব দা:বা:] বাদ মাগরিব, শনিবার।

মাওঃ ইয়াকুব সিলোনী সাহেব দা. বা. শনিবার বাদ মাগরিব (মাস্তুরাতের বয়ান)
সবচেয়ে বুনিয়াদি কথা হচ্ছে, আল্লাহ তাআলা, হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নেয়াবতের কারণে দাওয়াতের মেহনতের আজিম জিম্মাদারি সকল তবকার উপর দিয়েছেন। যাদের মধ্যে পুরুষও রয়েছেন এবং মহিলারাও রয়েছেন। এবং হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জীবনীতে দাওয়াতের যে নকশা কায়েম করেছিলেন সেই নকশায় উম্মতের এই দুই তবকাকেই রেখেছেন। দাওয়াতের সকল আমলের মধ্যে হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদেরকে পুরুষদের সাথেই রেখেছেন।
এই মেহনতের বুনিয়াদি উদ্দেশ্য হচ্ছে ইমানের ভেতরে পরিপূর্ণতা পয়দা করা। আম্বিয়া আলাইহিস সালামগণের মেহনতই ছিল ইমান এবং এবাদতের মধ্যে পরিপূর্ণতা পয়দা করা। এই দাওয়াতের মেহনতের মধ্যে যত আমল রয়েছে, যত গাশ্ত রয়েছে, যত দেখা-সাক্ষাত রয়েছে, এই সকল দেখা-সাক্ষাতের বুনিয়াদি উদ্দেশ্য ও সারাংশই হচ্ছে ইমানের পরিপূর্ণতা। সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ – এই ফরজের আমলি মশক হচ্ছে এই গাশ্তের ধারাবাহিকতা।
আল্লাহ তাআলা এই উম্মতের তালিম ও তরবিয়তের জন্য কেয়ামত পর্যন্ত মসজিদের আমলকে নির্দিষ্ট করেছেন। সাধারণভাবে এই উম্মতের সকল তবকার তালিম ও তরবিয়তের জন্য হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সিরাতের কিতাবসমূহে মসজিদের পরিবেশকেই পাওয়া যায়। হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জমানায় কুফর এবং শিরকের উপর যারা পিড়াপিড়ি করত তাদেরকে মসজিদের পরিবেশে রাখতেন যেন মসজিদের পরিবেশের দ্বারা তাদের দিলের সকল প্রকার সন্দেহ দূর হয়। এবং যেন তাদের অন্তরে আল্লাহর হুকুমসমূহ কবুল করার যোগ্যতা পয়দা হয়।
বর্তমানে আমাদের গাশ্তের অবস্থা এমন হয়েছে যে আমরা লোকদের সাথে দেখা-সাক্ষাত করি তাদের পরিবেশে এবং তাদেরকে সেখানেই ছেড়ে আসি। আবার এই আশা করি যে সে যেন হেদায়াত পায়। সে আমলের উপর উঠে যায়, খারাপ কাজ ছেড়ে দেয়। যেমনভাবে প্রত্যেক জিনিষের সংশোধনের জন্য একটা জায়গা নির্দিষ্ট থাকে ঠিক তেমনিভাবে এই উম্মতের সকল তবকা এবং এই উম্মতের এমন মানুষ যারা দ্বীন থেকে দূরে সরে গেছে, দ্বীনের কথা শুনতে চায়না, আল্লাহর হুকুমের উপর চলতে চায়না, এমন মানুষদের সংশোধন, এমন লোকদের তরবিয়তের মসনুন তরিকা তাদেরকে দাওয়াতের জরিয়ায়, গাশ্ত ও দেখা-সাক্ষাতের মাধ্যমে মসজিদের পরিবেশে নিয়ে আসা, অতঃপর মসজিদের বিভিন্ন আমলের হালকায় বসানো। এটা সেই আমল যার উপর হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মতের তালিম ও তরবিয়তের বুনিয়াদ রেখেছেন। নবুয়তের জমানায় সাধারণভাবে এই সিলসিলা কায়েম ছিল যে সাহাবায়ে কেরাম মসজিদে নববির ভেতরে নির্দিষ্টভাবে হালকা লাগাইতেন। এবং হজরতে সাহাবায়ে কেরাম সফর করতেন এবং যে যে এলাকায় বিজয় লাভ করতেন এবং যারা দ্বীন ইসলামে প্রবেশ করত তাদের তালিম ও তরবিয়তের জন্য মসজিদ কায়েম করে সেখানে দাওয়াত ও তালিমের আমল চালু করতেন। এবং সে হালকাসমূহে তাদেরকে বসাতেন যেন তাদের আকিদা দুরস্ত হয়, তাদের জেহালত দূর হয়, তাদের ইমান শক্তিশালী হয়, এবং তাদের ভেতর থেকে যেন আখলাক ও মুয়াশারাতের সকলপ্রকার খারাবী দূর হয়ে যায়। নবুয়তের জমানা এবং খোলাফায়ে রাশেদিনের জমানা যদি আমরা দেখি তাহলে দেখব যে সকল মসজিদে সাধারণভাবে এরকম পরিবেশ কায়েম ছিল। সিরাতের কিতাবসমূহে এরকম ঘটনা অনেক রয়েছে।
হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মক্কার জমানায় তোফেয়েল ইবনে আমরে দোসি যিনি তখনও কাফের ছিলেন। মক্কার কাফেররা তাকে ভয় দেখাল, ধমক দিল এবং হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সাক্ষাত করতে ও উনার কথা শুনতে নিষেধ করল। তুমি ফেতনায় পরে যাবে। এত পরিমাণ ভয় দেখাল যে তিনি নিজের কানে তুলা ভরে দিলেন। যেন হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোনো কথা তার কানে না যায়। চিন্তা করে দেখেন কিভাবে তাকে হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ব্যাপারে ভয় দেখাল। কিন্তু যখন তিনি মসজিদে হারামে প্রবেশ করলেন তখন উনার মনে এই কথা আসলো যে আমাকে উনার কথা শুনা উচিৎ। হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মসজিদে হারামে নামাজের মধ্যে কোরআন তেলাওয়াত করছিলেন। এটা দেখে সে চিন্তা করল আমাকে তার কথা শুনা উচিৎ। আমিতো বুদ্ধিমান, ভাল-মন্দ বিচার করার ক্ষমতা আমার আছে। উনার কথা ভাল হলে কবুল করব নতুবা অস্বীকার করব। মসজিদের ভেতরে কদম রাখার সাথে সাথেই তার দিলে এই কথা পয়দা হয়। অর্থাৎ সমস্ত মক্কার কাফেররা তাকে দ্বীন থেকে বিমুখ করার জন্য যে মেহনত করেছিল, মসজিদে কদম রাখার সাথে সাথেই যেন তাদের মেহনতে পানি ঢেলে দিল। আপনারা আন্দাজ করে দেখেন আল্লাহর ঘরের প্রভাব কি রকম। সুতরাং যে হাত দিয়ে তিনি কানে তুলা ঢুকিয়েছিলেন সেই হাত দিয়েই তিনি সেই তুলা বের করে দিলেন। এরপর হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কালাম শুনতে থাকলেন, শুনতে থাকলেন। হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজ থেকে ফারেগ হওয়ার পরে তিনি কলেমা পরে দ্বীন ইসলামে দাখিল হয়ে গেলেন। তারপর এই হজরত তোফেয়েল ইবনে আমরে দোসি রা. নিজের দাউস গোত্রে গমন করলেন এবং প্রায় ১৫ বৎসর নিজের গোত্রকে ইনফেরাদি দাওয়াত দিতে থাকলেন এবং ৮০ টি পরিবার দ্বীন ইসলামে দাখিল হওয়ার জরিয়া বনে গেলেন। এই সবকিছু মসজিদের পরিবেশ এবং মসজিদের আমলের প্রভাব ছিল।
হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেদমতে বনু সাকিফের লোকেরা রমজান মাসে দ্বীন এবং ইসলাম কবুল করার জন্য হাজির হলেন। কিন্তু তারা শর্ত দিল যে তারা এক বৎসর মূর্তি পুজা পরিত্যাগ করবে না। হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে এক মাসের সুযোগ দিলেন। একটু আন্দাজ করে দেখেন তাদের অন্তর কত শক্ত ছিল। তারা আরো বলল যে তারা নামাজ পড়বে না। হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন ঐ দ্বীনের মধ্যে কোনো ভালাই নাই যে দ্বীনের মধ্যে রুকু নাই, নামাজ নাই। তারা আরো বলল যে তারা জাকাত দিবেনা আর রোজা রাখবেনা। এবং জিহাদ করবেনা। এরকম বুনিয়াদি হুকুমসমূহকে তারা অস্বীকার করল। আবার এটাও চাচ্ছে যে তারা দ্বীন ইসলামে দাখিল হবে। হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুঝতে পারলেন যে এখনও তাদের মধ্যে দ্বীনের উপর চলার যোগ্যতা পয়দা হয় নাই। সুতরাং হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সকল শর্ত মনে নিলেন এবং তাদের জন্য মসজিদের ভেতরে তাবু টাঙালেন। এবং অনেক এহতেমামের সাথে মসজিদের পরিবেশে রাখলেন। রেওয়ায়েতে আছে তাদেরকে মসজিদে রাখার হেকমত কি ছিল। তাদের অন্তর যে আল্লাহর হুকুম মানার ব্যাপারে শক্ত ছিল সেটা যেন মসজিদের পরিবেশে থেকে নরম হয়ে যায়। রেওয়ায়েতে আছে কিছু দ্বীন অতিক্রান্ত হওয়ার পর তারা রমজানের রোজা রাখা শুরু করে দিল। নামাজ পড়া শুরু করে দিল। দ্বীনের সকল ফরজ ও হুকুমসমূহ মানার জন্য ভেতর থেকে তৈরি হয়ে গেলেন। কোন জিনিষ তাদেরকে পরিবর্তন করেছে। সেটা মসজিদের পরিবেশের প্রভাব ছিল, সেটা ফেরেশতাদের পাখার প্রভাব ছিল। এমন জিদসম্পন্ন লোকদেরকে ইসলামের ফরজসমূহ মানার ব্যাপারে তৈরি করে দিল। কেয়ামত পর্যন্ত উম্মতের এমন তবকা প্রত্যেক জমানায়, প্রত্যেক জায়গায় পাওয়া যাবে। যারা আল্লাহর হুকুমসমূহ মানা থেকে দূরে থাকবে। তাদেরকে ইছলাহ ও তরবিয়তের সুন্নত তরিকা নবীর মাধ্যমে কেয়ামত পর্যন্ত নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। এমন লোকদের চিকিৎসা কেয়ামত পর্যন্ত নির্দিষ্ট আছে। তাদেরকে মসজিদের পরিবেশে এনে রাখ। তারা আল্লাহর হুকুমসমূহ মানার জন্য তৈরি হয়ে যাবে।
হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জমানায় এই অভ্যাস ছিল যে যদি কারো দ্বারা কোনো গুনাহ হয়ে যেত, শরীয়তের খেলাফ কোনো কাজ করে ফেলত, এবং শরীয়ত অনুযায়ী কোনো শাস্তি পাওনা থাকলে তাও শুনিয়ে দেয়া হত, এর পরেও তার তালীম ও তরবিয়তের জন্য, তার ভেতর থেকে ঐ গুনাহের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করার জন্য, তাকে মসজিদের পরিবেশে রাখা হত। এই কারণে হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চোরকে মসজিদের খুঁটির সাথে বেঁধে রাখতেন। বুখারি শরিফের রেওয়ায়েতে আছে, কাজী শুরাইহ রহ. এর ব্যাপারে বর্ণনা আছে যে তিনি ঋণগ্রস্ত লোকদেরকেও মসজিদের ভেতরে বেঁধে রাখতেন। এভাবে হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুমামা বিন আসসালকে মুশরিক অবস্থায় মসজিদের খুঁটির সাথে বেঁধে রেখেছেন। এবং তিন দিন পর্যন্ত প্রতিদিন তার সাথে এহতেমামের সহিত দেখা করে জিজ্ঞেস করতেন এখন তোমার ইচ্ছা কী। সে উত্তর দিত হয়তোবা আপনি আমাকে কতল করে দেন অথবা ফিদিয়া নিয়ে ছেড়ে দেন। কিন্তু তিন দিন পর্যন্ত সে দ্বীন ইসলাম কবুল করতে রাজীই হয়নি। হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটা চাইতেন যে অন্ততপক্ষে সে মসজিদের এই পরিবেশের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে দ্বীন ইসলাম কবুল করার জন্য তৈরি হয়ে যায়। যেমন কোনো হাসপাতালে ডাক্তার প্রতিদিন তার রোগীর খোঁজখবর নেয়, রোগীর অবস্থা কেমন আছে, খাওয়াদাওয়া কেমন চলছে, স্বাস্থ্যের কী অবস্থা। হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনিভাবেই তার সাথে প্রতিদিন এহতেমামের সাথে দেখা করতেন। মসজিদের পরিবেশ এবং এর ভেতরে দাওয়াতের হালকা চলতেছিল। আর খুঁটিতে একজন মুশরিককে আল্লাহর রাসুল বেঁধে রেখেছেন। এবং তিন দিন পর্যন্ত যেভাবে হাসপাতালের পরিবেশে ডাক্তার রোগীর খোঁজখবর নেয় ঠিক তেমনিভাবে তার খোঁজখবর নিচ্ছেন। বর্তমানে উম্মতের অগণিত তবকা, এবং তবকার অগণিত ব্যক্তি এমন রুহানি রোগে আক্রান্ত হয়ে গিয়েছে যে তাদের চিকিৎসা এই মসজিদের পরিবেশ ব্যতীত সম্ভব নয়। সুতরাং তিন দিন পর শুমামা বিন আসসালকে যখন ছেড়ে দেয়া হল তখন সে বাহিরে গিয়ে গোসল করে এসে কলেমা পড়ে দ্বীন ইসলামে দাখিল হয়ে গেলেন। এটাই হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সিরাত। উম্মতকে এটার উপরেই আনতে হবে। এটাই আমাদের দাওয়াত এবং মসজিদ আবাদির মেহনতের বুনিয়াদি সারকথা।
কোনো এলাকা অথবা দেশের মুসলমানদের আকীদা এবং তাদের মুয়াশারা, এলেম ও আমলের সেই স্তর হয়, যেই স্তর সেই এলাকার অথবা দেশের মসজিদের আমলের হবে। এত গভীর সম্পর্ক রয়েছে মুসলমানদের জীবনের এবং তাদের মসজিদের আমলের সাথে। যদি কোনো এলাকার মসজিদে দাওয়াতের আমল থাকে, আকিদার আলোচনার হালকা থাকে, এলেমের হালকা থাকে, হালাল-হারাম আলোচনার হালকা থাকে, এবং কোরআনের হালকা থাকে, তাহলে সেখানকার মুসলমানদের জীবনের আকীদা, মুয়ামালাত, মুয়াশারাত, এলেমের দ্বারা ভরপুর হবে। আর যদি মসজিদসমূহ ইমান এবং এলেমের হালকা থেকে খালি থাকে, দাওয়াতের আমল থেকে খালি থাকে, তাহলে সেই এলাকার মুসলমানদের জীবনের আকীদা সহি হওয়া, আখলাক ও মুয়ামালাত সহি হওয়া, এবং ইলমে এলাহি এদের জীবনে থাকা অসম্ভব। এজন্য হজরত উমর রা. এক প্রশ্নের মাধ্যমেই শাম দেশের মুসলমানদের অবস্থা যাচাই করে ফেললেন। ইবনে মুয়াবিয়া কিন্দি র. কে জিজ্ঞেস করলেন তোমাদের মসজিদসমূহের কী অবস্থা। আবার নিজেই বললেন আমার মনে হয় মানুষেরা বিক্ষিপ্ত জংলী উটের মত মসজিদে প্রবেশ করে আর যদি নিজের পরিচিত কারো হালকা মসজিদে দেখতে পায় সেখানে বসে নতুবা তারা বিক্ষিপ্ত জংলী উটের মত মসজিদ থেকে বাহির হয়ে যায়। ইবনে মুয়াবিয়া কিন্দি র. উত্তর দিলেন না আমিরুল মুমেনিন, আমাদের মসজিদসমূহে অগণিত হালকা কায়েম হয়ে থাকে এবং যারা মসজিদে আসে তারা এহতেমামের সাথে সেই হালকাসমূহে বসে। এটা শুনে হজরত উমর রা. বললেন যতদিন তোমাদের মসজিদসমূহে এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে, এবং মসজিদের হালকাসমূহের সাথে মুসলমানদের সম্পর্ক বজায় থাকবে ততদিন পর্যন্ত তোমরা খায়েরের উপর থাকবে। যতদিন লোকদের তাআল্লুক মসজিদের সাথে থাকবে ততদিন তোমরা খায়েরের উপর থাকবে। উম্মতের প্রত্যেক জমানায় সকল প্রকার খায়ের ও ভালাই টিকে রাখার জন্য মসজিদের আমলসমূহের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা।
মসজিদ ইমান এবং একীন সহি করার বুনিয়াদি জায়গা। আর বাজার ইমান এবং একীন নষ্ট হওয়ার বুনিয়াদি জায়গা। দুইটা বড়ো ধরণের কেন্দ্র। একটা মসজিদের পরিবেশ আরেকটা বাজারের পরিবেশ। শয়তান সকল প্রকার ফেতনা ফাসাদ, কুফর আর শিরিক ছড়ানোর বাজারকে আড্ডা বানিয়েছে আর সেখানেই নিজের তাবু টাঙিয়েছে। আর সেখানেই নিজের পতাকা উড়িয়েছে। আর সেখান থেকেই প্রতিদিন নিজের বাহিনী আর জামাতকে পুরা আলমে পাঠায়। আর প্রতিদিন তাদের কারগুজারী শুনে। এর মোকাবিলায় আল্লাহ তাআলা সর্বোৎকৃষ্ট জায়গা বানিয়েছেন যার সাথে সম্পর্ক গড়ে তুললে সে আল্লাহ্‌ তাআলার মাহবুব বান্দা বনে যায়, সেটা হচ্ছে মসজিদের পরিবেশ। কেয়ামত পর্যন্ত দুইটা বুনিয়াদি জায়গা। হযরতজী ইউসুফ সাব রহঃ বলতেন আমাদের মেহনতে এক ঘন্টা, দেড় ঘন্টা, আড়াই ঘন্টার কোন মাসলা নেই। আমাদের এখানে আড়াই ঘন্টার কোনো দাওয়াত নেই। বরং বলতেন আড়াই ঘন্টার দাওয়াত মসজিদগুলোকে অফিস বানিয়ে ফেলেছে। বরং বলতেন একজন মুসলমান একদিনে যত ঘণ্টা বাজারে, খারাবীর পরিবেশে, শয়তানী আড্ডায় কাটায়, যার ফলে তার ইমান এবং একীনে খারাবী আসছে। ঠিক তত ঘণ্টা তার জন্য মসজিদে অবশ্যই দিতে হবে। এছাড়া এই উম্মতের তরবিয়তের আর কোনো রাস্তা নেই। যদি বাজারে ছয় ঘণ্টা কাটায়, বাজারে বসে দুনিয়ার আসবাবসমূহকে চোখ দিয়ে দেখে, তাহলে সেই দিন মসজিদের পরিবেশে ছয় ঘণ্টা কাটাতে হবে। যাতে সেই একীন দুরুস্ত হয়ে যায় যেটা বাজারের পরিবেশে থেকে নষ্ট হয়েছে।
হযরতজী মাওলানা ইউসুফ সাব রহঃ বলতেন, এই মেহনত, গাশ্ত ও দেখা-সাক্ষাতের বুনিয়াদি মাকসাদ, আর এই কাজের মধ্যে প্রথম কদম আর প্রথম সিঁড়ি হচ্ছে প্রত্যেক মুসলমানের দিলের গভীরতায় একথার একীন জমে যে প্রত্যেক সমস্যার সমাধান মসজিদের মধ্যে রয়েছে। এটাই সবচেয়ে বুনিয়াদি কথা। দুই, আড়াই ঘণ্টা, আট ঘণ্টার ফলাফলে এক এক জন মুসলমানের আল্লাহর ঘরের সাথে সম্পর্ক, আল্লাহর উঁচু সত্তার সাথে সম্পর্ক, এবং আল্লাহর খাজানা হতে সরাসরি নেয়ার মেজাজ বনে যায়। প্রথম যুগে সাহাবা এবং মুসলমানদের মসজিদের সাথে এমন গভীর ছিল এবং আল্লাহর খাজানা থেকে নেয়ার এমন পরিবেশ বনে গিয়েছিল যে সেই যমানায় মানুষতো মানুষ, জীবজন্তু পর্যন্ত, জঙ্গলের পশুপাখি, যাদের কোনো শরীয়ত নেই। তারা পর্যন্ত তাদের রুটি রুজির সমস্যা সমাধান করার জন্য মসজিদে চলে আসত। সহি রেওয়ায়েতে আছে, হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক নামাজ থেকে ফারেগ হওয়ার পরে মসজিদে বসে ছিলেন। জঙ্গল থেকে একশত বাঘ সকল বাঘের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি হয়ে মসজিদে এসে এমনভাবে বসে গেল যেমন সাহাবারা বসতেন। হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখে সাহাবাদের বললেন এই বাঘেরা তাদের রুটি রুজির সমস্যা সমাধান করার জন্য মসজিদে এসেছে। বল তোমাদের কি মতামত। সাহাবারা বললেন আপনি যা সিদ্ধান্ত নিবেন আমরা টা মেনে নিব। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তোমাদের যাদের কাছে বকরীর পাল আছে সে পাল হতে বছরে একটি বকরী তাদেরকে দিয়ে দিবে। এটা শুনে সাহাবারা নিজেদের অভাবের অভিযোগ করলেন। নিজেদের পেরেশানির কথা বললেন। এরপর হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনটি আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করে বাঘদের বললেন তোমরা হামলা করে বকরীর পাল হতে তোমাদের প্রয়োজন পরিমাণ রুজি নিয়ে নিবে। আর সাহাবাদেরকে বললেন তোমরা তোমাদের বকরীর পালগুলোকে হেফাজত করবে। জানোয়ার, জঙ্গলের হিংস্র প্রাণী, তাদের প্রয়োজন পুরন করার জন্য তারা মসজিদে এসেছে, তাহলে আপনারা বলেন সে যুগের মুসলমান কি তাদের রুটি রুজির সমস্যা নিয়ে কোনো অফিসে কি যেতে পারে। তারা কি পরিমাণ মসজিদে সময় দিতেন, প্রত্যেক সমস্যা সমাধানের জন্য সাহাবারা মসজিদে আসতেন। এটা কখন হবে যখন এই মসজিদের হালকাগুলোর দ্বারা একেকজনের একীন দুরুস্ত হবে, আল্লাহর সাথে সম্পর্ক পয়দা হবে, তখন সে সকল সমস্যাকে নিয়ে মসজিদে হাজির হবে। এটাই আমাদের দেখা-সাক্ষাতের, গাশ্তের, মসজিদ আবাদীর বুনিয়াদি মাকসাদ।
এর জন্য গাশ্ত ও দেখা-সাক্ষাতের মাধ্যমে উম্মতের প্রত্যেক ব্যাক্তিকে মসজিদ এবং মসজিদের আমলের সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি করা এটাই বুনিয়াদি সারকথা। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা, হজরত উমর, মুয়াজ ইবনে জাবাল, এবং হজরত আবু হোরায়রা রাদি. সহ অন্যান্য সাহাবারা সাহাবাদের উপর গাশ্ত করে এক এক সাহাবীর হাত ধরে বলতেন, আস, চল, মসজিদে বসে আমরা আমাদের ঈমানকে তাজা করি। আর আমরা কিছুক্ষণ ঈমান নিয়ে আসি। আমাদের সকল গাশ্ত ঈমানের পরিপূর্ণতার বুনিয়াদি মাধ্যম। যে মসজিদে চলে এসেছে, আমাদের বুনিয়াদি জিম্মাদারি হচ্ছে তাকে ভাল মত এস্তেকবাল করা, তাকে অজু করিয়ে, যদি গোসলের প্রয়োজন হয়, গোসল করিয়ে, প্রয়োজনে কাপড় পরিবর্তন করিয়ে তাকে সেই সময়ের ফরজ হুকুমকে আদায় করার জন্য তৈরি করা। আমাদের গাশ্তের সারকথা হচ্ছে তাকে ফরজের উপর আনতে হবে। সাহাবাদের সিরাতেও রয়েছে যারাই দ্বীনে প্রবেশ করত তাদেরকে ফরজের উপর উঠানো হত। সর্বপ্রথম তাদেরকে নামাজের তালিম দেয়া হত। নামাজ থেকে ফারেগ হওয়ার পর ঈমানের হালকায় বসাতে হবে। তার আকীদা ঠিক করতে হবে, তাকে বুনিয়াদি ফরজসমূহের তালীম দিতে হবে। যদি কলেমা পড়তে না পারে তাহলে কলেমার শব্দগুলো ঠিক করাতে হবে। আপনি চিন্তা করেন যে হজরত আব্বাস রা., হজরত আবু সুফিয়ানকে কলেমা পড়াতে চাচ্ছেন। কিন্তু তার মুখে কলেমা আসতেছিলনা। রাত্রভর মেহনত করলেন যেন তার কলেমার শব্দগুলো ঠিক হয়ে যায়। এটা বুনিয়াদি সুন্নত যে প্রথমে কলেমা ঠিক করি, পড়ে ফরজ হুকুমসমূহের তালীম দেই। সাথে সাথে তাকে দাওয়াত দিয়ে মসজিদের আমলের জন্যও তৈরি করি। প্রতিদিন নিজের পক্ষ থেকে ৮ ঘণ্টার তাশকিল করি, আর যে যতটুকু সময় মসজিদে দেয়ার জন্য তৈরি হয়ে সেটা কবুল করি। অতঃপর আল্লাহর রাস্তায় লম্বা সময় এবং দূরে সফর করার জন্য, দেশে-বিদেশে, পুরুষ জামাতে, মাস্তুরাত জামাতে বের হওয়ার জন্য তাকে তাশকিল করি। সবচেয়ে উঁচু দরজা হচ্ছে প্রত্যেক উম্মতিকে প্রত্যেক বছর চার মাস আল্লাহর রাস্তায় লাগানোর জন্য তৈরি করা। আরেকটা বুনিয়াদি তাশকিল করতে হবে সে যেন নিজেকে এবং তার সন্তানদের মকতবে পাঠায়। মকতব কায়েম করা এবং সকল উম্মতকে মকতবের সাথে জুড়ানো এটা আমাদের আকাবিরদের মেহনতের খোলাসা। উম্মতের প্রত্যেক তবকার রুহানি রোগের চিকিৎসা এগুলোই। প্রথম যুগে নবুয়তের জমানায় এটাই মাসনুন তরিকা যে উম্মতকে আকিদার এবং বুনিয়াদি ফরজসমূহের তালীম মসজিদের পরিবেশে, ওলামাদের সোহবতে, কিতাব ব্যাতীত তাদেরকে নিজের আমলের মাধ্যমে তালীম দেয়া হত। আর চতুর্থ বুনিয়াদি তাশকিল হচ্ছে নিজের ঘরের মধ্যে দাওয়াতের আমল কায়েম করা। নিজের ঘরের মধ্যে পাঁচ আমলের সাথে তালীম চালু করা। এই চারটা বুনিয়াদি তাশকিল যা আমাদেরকে একেক উম্মতকে করতে হবে।
ঘরের ভেতরে তালীম এবং এর মধ্যে কোরআন ও হাদিসের হালকা, এটা এই উম্মতের মহিলা এবং বাচ্চাদের তালীম ও তরবিয়তের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে ব্যবস্থা। কোরআনের হালকা নিজের ঘরের ভেতরে কায়েম করা এটা আল্লাহর হুকুম। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র বিবিদেরকে আল্লাহ্‌ বলেছেন, নিজের ঘরের মধ্যে কোরআন এবং হেকমত কায়েম কর। কোরআন মনে রাখ, চর্চা কর, কোরআনের আলোচনা কর। আল্লাহর হুকুমের কারণেই ঘরের মধ্যে কোরআনের হালকা এবং আল্লাহর হুকুমের কারণেই ঘরের মধ্যে হাদিসের হালকা কায়েম করতে হবে। মুফতি শফী সাব রহ. তাফসীরের কিতাবে উল্লেখ করেছেন, এই হুকুম শুধুমাত্র হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র বিবিদের জন্য খাস নয় বরং প্রত্যেক জমানায় প্রত্যেক মহিলাদের জন্য সাধারণভাবে এই হুকুম। এই জন্য সকল জমানার সকল মা-বোনদের জন্য এটা কর্তব্য যে তারা যেন আল্লাহ্‌র হুকুম মনে করে, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত মনে করে, এবং এর ভেতরে নিজের তরবিয়তের একীন মনে করে নিজের ঘরের মধ্যে কোরআন ও হাদিসের হালকা কায়েম করে।
ঘরের তালীমের দ্বারা আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে কেয়ামত পর্যন্ত তরবিয়ত ও সংশোধনের ওয়াদা রয়েছে। আল্লাহ্‌ তাআলা ওয়াদা করেছেন যে এই আমলসমুহের মাধ্যমে গুনাহের দুর্গন্ধ ও অপবিত্রতা দূর করে তোমাদেরকে পরিপূর্ণ পবিত্র করে দিবেন। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত এই আমল সমূহ কে পবিত্র করার আমল হিসেবে অভিহিত করেছেন। ঘরের মধ্যে কুরআন এবং হাদিসের হালকা কায়েম করার দ্বারা আল্লাহতালা বান্দার সংশোধন এবং আত্ম পরিশুদ্ধির ব্যবস্থা করবেন। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত হযরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু কে শুধুমাত্র নিজের কুদরতের দ্বারা পবিত্র করেছেন। কুফর এবং শিরিকের দুর্গন্ধ এবং নাপাকি থেকে পবিত্র করেছেন। এক তালিমের হালকার বরকতে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর ভেতর থেকে সকল প্রকার কুফর এবং শিরিকের প্রভাব দূর হয়ে গিয়েছে। উমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু তার বোনকে সারারাত মারপিট করলেন। মারপিট করার আগে তার বোন সুরা ইকরা পড়তেছিল। মারপিট করার পরে যখন ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু ঘুমিয়ে পড়লেন। ঘুম থেকে উঠে দেখলেন তার বোন আবারো সূরা ইকরা পড়ছে। সকাল সকাল তার কানে কোরআনের বানী প্রবেশ করেছে। এর দ্বারাই তার অন্তর পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। যাদেরকে আল্লাহতালা পূর্ব থেকেই ঈমান এবং ইসলামের দৌলত দিয়ে রেখেছেন তারা যদি নিজেদের ঘরের মধ্যে কুরআনের হালকা কায়েম করে তাহলে তাদের কত তরবিয়ত হবে কত সংশোধন হবে।
হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সারা জীবনের অভ্যাস সিরাতের কিতাবে পাওয়া যায়, এবং হাদিসের কিতাবসমূহে পাওয়া যায় যে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কখনো ঘরে তালিমের হালকা বাদ দেননি। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালা করে একেকজন বিবি সাহেবানদের ঘরে থাকতেন। যখন যে বিবির ঘরে পালা আসতো সে বিবির ঘরে প্রবেশ করা হতে বাহির হওয়া পর্যন্ত ঘরের মধ্যে তালিমের হালকাই কায়েম থাকতো। ২৩ বছরের জীবনে, মদিনার জীবনে যখনই যে বিবির ঘরে তিনি থাকতেন সেই বিবির ঘরে তালিমের হালকা কোরআনের হালকা কায়েম করতেন। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরের মধ্যে অত্যন্ত এহতেমামের সাথে তালিম করতেন। নবুয়তের আমলে এবং দাওয়াতের আমলে সর্বপ্রথম আমল যার দ্বারা হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের নবুয়তের মেহনত কে শুরু করেছেন সেটা হচ্ছে ঘরের ভেতরে কোরআন এবং হাদিসের হালকা কায়েম করা। সিরাতের কিতাব সমূহে এর পূর্বে আর কোন আমল দেখা যায় না। আপনি হেরা গুহায় ছিলেন সেখানে আপনার উপর ওহী নাজিল হয়েছিল। এবং সম্পূর্ণ ঘটনা ব্যাখ্যা সহকারে কিতাবের মধ্যে আছে। আপনি সেই আয়াতকে নিয়ে সেই ওহীকে নিয়ে আপনি না কোন শত্রুদের কাছে গিয়েছেন, না কোন বন্ধুদের কাছে গিয়েছেন। মসজিদে যান নি। বরং আপনি সোজা সেই আমলগুলোকে নিয়ে হযরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহার কাছে গেলেন। ঘরে গিয়ে যখন আপনি শান্তি পেলেন তখন হীরা গুহার সমস্ত ঘটনা তিনি খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে শোনালেন। এবং উনাকে সূরা ইকরার ওই সমস্ত আয়াতগুলো পড়ে শোনালেন যা প্রথম ওহীতে নাজিল হয়েছিল। যদি আমরা বুখারী শরীফ খুলে এই ঘটনা পড়ি তখন আমরা বলি যে এটা বুখারীর দরস চলছে। হাদিসের হালকা চলছে। আর আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে জবান মোবারকের দ্বারা নিজের সমস্ত কেচ্ছা হযরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে শোনালেন , এটা কি হাদিসের হালকা হবে না। এটা কি ঘরের তালিম হবে না। নিজের বিবিকে নিয়ে ঘরে হাদিসের হালকা কায়েম করা এবং সেখানে কোরআনের আয়াত শোনানো, এটা কি হাদিসের হালকা হবে না এটা কি কোরআনের হালকা হবে না। নিঃসন্দেহে এটা হাদিসের হালকা এবং এটা কোরআনের হালকা। এবং এই ধারাবাহিকতা আপনার পুরা জীবনে পাওয়া যায়।
হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি দিনের বেলা ঘরে আসার সুযোগ না পেতেন এবং যদি আপনি ক্লান্ত থাকতেন, আপনি ঘরে আরাম করার পরে রাত্রে যখন জেগে উঠতেন তখনই হালকা বানিয়ে ফেলতেন। হযরত উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত যে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে তশরিফ আনলেন এবং যখন রাত্রে জেগে উঠলেন। উঠেই তিনি এই হাদিস বয়ান করলেন আজকে রাত্রে অনেক ফিতনার জিনিস এসেছে এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে অনেক খজানাও এসেছে। এরপর বললেন অনেক মহিলা দুনিয়াতে কাপড় পরিধান করবে কিন্তু আখেরাতে বিবস্ত্র অবস্থায় উঠবে। কেউ কি আছে এই ঘুমন্ত মহিলাদেরকে জাগিয়ে দেয় যেন তারা রাত্রে এবাদত করে। এটা কি ছিল। হযরত উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহার সাথে রাত্রে বেলায় হাদিসের হালকা কায়েম করা। ইমাম বুখারী রহমতুল্লা আলাইহি বুখারী শরীফে রাতের বেলায় এলেন অধ্যায়ন করা অধ্যায়ে এই হাদিস এনেছেন। আর আমরা দিনের কত তাগাদায় ব্যস্ত থাকি। যতই ব্যস্ত থাকি না কেন রাতের বেলা বাসায় ফিরে বিবি বাচ্চাদেরকে নিয়ে ঘরে তালিমের হালকা কায়েম করা এটা হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। ইহা ব্যতীত আমাদের দ্বীনের মেহনত অসম্পূর্ণ। আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কত গুরুত্বের সাথে যখন তিনি ঘরে আসছেন নিজের বিবির সাথে হাদিসের হালকা কায়েম করছেন তাহলে এই উম্মতের জন্য এর চেয়ে বড় আর কি সুন্নত হতে পারে। পুরা মজমা আজম এবং এরাদা করি যে আমরা যতই ক্লান্ত হই না কেন এবং যতই বাহিরের তাকাযা পুরা করি না কেন কিন্তু প্রতিদিন এতে ইহতেমামের সাথে ঘরে এসে তালিমের হালকা কায়েম করব। ইনশাআল্লাহ।
ঘরের ভেতরে তালিমের জন্য সময় নির্দিষ্ট করা এবং সেই নির্দিষ্ট সময়ে নিজে উপস্থিত থাকা। অতঃপর ঘরের সবাইকে হাজির করা, যে উপস্থিত নয় তাকেও ডাক দেওয়া। এরপরে হাদিসের হালকা কায়েম করা। এসব কিছু সিরাত থেকে প্রমাণিত। মুসলিম শরীফের রেওয়ায়াতে হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব বিবিদেরকে একত্রিত করে এরশাদ ফরমান আমার মৃত্যুর পরে আমার সাথে সর্বপ্রথম সেই বিবির সাক্ষাৎ হবে যার হাত সবচেয়ে লম্বা হবে। ইহা শোনার পরে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিবিগণ নিজেদের হাত মাপা শুরু করলেন। পরে জানা গেল এর অর্থ হচ্ছে সবচাইতে বেশি সদকা খয়রাত যিনি করেন। এবং তিনি হচ্ছেন হযরত জয়নাব রাদিয়াল্লাহু আনহা। তিনি নিজের হাতে যা কিছুই আসতো সবকিছুই সদকা খয়রাত করে দিতেন। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে এসে সব বিবিদেরকে একত্রিত করে হালকা বানালেন। যে উপস্থিত ছিল না তাকেও ডেকে আনলেন। হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন যে তিনি নিজে সব বিবিদেরকে একত্রিত করেন। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন হযরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহা কোথায়। অতঃপর ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহু উপস্থিত হলেন এরপরে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিস বর্ণনা করলেন। হালকা চলাকালীন হযরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহা কে নিকটে নিয়ে আসলেন এবং ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহার কানে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি হাদিস বয়ান করলেন যা শুনে ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা কান্না আরম্ভ করলেন। আবার পুনরায় ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহার কানে আরেকটি হাদিস বয়ান করলেন যা শুনে ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা হেসে দিলেন। পরবর্তীতে হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞেস করলেন যে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমার কানে কোন হাদিস বর্ণনা করেছেন যা শুনে তুমি একবার কান্না করলে আবার হেসে দিলে। ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন এটা তো আল্লাহর নবীর রহস্য। এটা বলা যাবে না। যখন হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকাল হয়ে গেল হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বললেন আমি যে তোমার মা হই এই হক মনে করে আমাকে সে হাদীসটি শুনিয়ে দাও যা তোমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কানে কানে বলেছিলেন। কত শখ, কত জজবা একটা হাদিস শোনার জন্য। আজকে হাদিস শোনার জন্য সেরকম শখ এবং জজবা আমাদের ভিতর নেই। যদিও বর্তমানে হাদিসগুলো কিতাব আকারে আমাদের কাছে রয়েছে। হযরত ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা আম্মাজান আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহাকে শোনালেন যে আমাকে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমবার আমার কানে কানে বললেন প্রত্যেক বছর জিব্রাইল আলাই সালাম আমাকে একবার পুরা কোরআন শোনান কিন্তু এই বছর আমাকে পুরা কোরআন দুইবার শুনান। এটা এই বিষয়ের আলামত যে আমার এই পৃথিবী থেকে বিদায়ের সময় অত্যন্ত নিকটবর্তী। এটা শুনে আমি কান্না করা আরম্ভ করে দিলাম যেটা আপনি দেখেছিলেন। দ্বিতীয়বার হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কানে কানে বললেন যে ফাতেমা তুমি কি এই বিষয়ে সন্তুষ্ট নয় যে তোমাকে বেহেশতে মহিলাদের সরদার বানিয়ে দেয়া হয়। এটা শুনে আমি হেসে দিয়েছিলাম। এখন আপনারা চিন্তা করে দেখেন তালিমের হালকা কায়েম করার জন্য সবাইকে একত্রিত করলেন, মেয়ে উপস্থিত নেই, তাকেও ডেকে আনলেন। এরপরে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিস বর্ণনা করলেন। এটাই সুন্নত তরিকা। এই উম্মতের সকল ব্যক্তি, সাধারণ মানুষ, আলেম-ওলামা সবার জন্য কিয়ামত পর্যন্ত একটাই মসনুন তরিকা যে নিজের ঘরে এসে এভাবেই তালিম করে। এই ঘরের তালিম নকল হতে হতে পরে সহীহ মুসলিমের একটি হাদিস হয়ে যায়। এ সকল হাদিসগুলো বিভিন্ন হাদিসের কিতাবে একত্রিত হওয়ার পূর্বে ঘরে ঘরে তালিম হত। এজন্য সবাই নিয়ত করি আমরা এহতেমামের সাথে ঘরের সবাইকে একত্রিত করে ঘরের মধ্যে রোজানা তালিম করব। কুরআনের হালকা করবো, হাদিসের হালকা করবো, ছয় সিফতের মুজাকারা, তাশকিল এবং পরবর্তী দিনের তিন আমলের মাশওয়ারা। কে কোরআনের মশ্ক করাবে, কে কিতাবে তালিম করবে এবং কে ছয় সিফাতের মুজাকারা করবে। একদিন মুন্তাখাব হাদিস কিতাবের তালিম হবে আরেকদিন ফাজায়েলে আমল এবং ফাজায়েলে সাদাকাত এর তালিম হবে।
চলবে……………

মাস্তুরাত এর বয়ান, [মাও: ইয়াকুব সিলোনি সাহেব দা:বা:] বাদ মাগরিব, শনিবার।

মাওঃ ইয়াকুব সিলোনী সাহেব দা. বা. শনিবার বাদ মাগরিব (মাস্তুরাতের বয়ান)
সবচেয়ে বুনিয়াদি কথা হচ্ছে, আল্লাহ তাআলা, হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নেয়াবতের কারণে দাওয়াতের মেহনতের আজিম জিম্মাদারি সকল তবকার উপর দিয়েছেন। যাদের মধ্যে পুরুষও রয়েছেন এবং মহিলারাও রয়েছেন। এবং হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জীবনীতে দাওয়াতের যে নকশা কায়েম করেছিলেন সেই নকশায় উম্মতের এই দুই তবকাকেই রেখেছেন। দাওয়াতের সকল আমলের মধ্যে হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদেরকে পুরুষদের সাথেই রেখেছেন।
এই মেহনতের বুনিয়াদি উদ্দেশ্য হচ্ছে ইমানের ভেতরে পরিপূর্ণতা পয়দা করা। আম্বিয়া আলাইহিস সালামগণের মেহনতই ছিল ইমান এবং এবাদতের মধ্যে পরিপূর্ণতা পয়দা করা। এই দাওয়াতের মেহনতের মধ্যে যত আমল রয়েছে, যত গাশ্ত রয়েছে, যত দেখা-সাক্ষাত রয়েছে, এই সকল দেখা-সাক্ষাতের বুনিয়াদি উদ্দেশ্য ও সারাংশই হচ্ছে ইমানের পরিপূর্ণতা। সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ – এই ফরজের আমলি মশক হচ্ছে এই গাশ্তের ধারাবাহিকতা।
আল্লাহ তাআলা এই উম্মতের তালিম ও তরবিয়তের জন্য কেয়ামত পর্যন্ত মসজিদের আমলকে নির্দিষ্ট করেছেন। সাধারণভাবে এই উম্মতের সকল তবকার তালিম ও তরবিয়তের জন্য হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সিরাতের কিতাবসমূহে মসজিদের পরিবেশকেই পাওয়া যায়। হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জমানায় কুফর এবং শিরকের উপর যারা পিড়াপিড়ি করত তাদেরকে মসজিদের পরিবেশে রাখতেন যেন মসজিদের পরিবেশের দ্বারা তাদের দিলের সকল প্রকার সন্দেহ দূর হয়। এবং যেন তাদের অন্তরে আল্লাহর হুকুমসমূহ কবুল করার যোগ্যতা পয়দা হয়।
বর্তমানে আমাদের গাশ্তের অবস্থা এমন হয়েছে যে আমরা লোকদের সাথে দেখা-সাক্ষাত করি তাদের পরিবেশে এবং তাদেরকে সেখানেই ছেড়ে আসি। আবার এই আশা করি যে সে যেন হেদায়াত পায়। সে আমলের উপর উঠে যায়, খারাপ কাজ ছেড়ে দেয়। যেমনভাবে প্রত্যেক জিনিষের সংশোধনের জন্য একটা জায়গা নির্দিষ্ট থাকে ঠিক তেমনিভাবে এই উম্মতের সকল তবকা এবং এই উম্মতের এমন মানুষ যারা দ্বীন থেকে দূরে সরে গেছে, দ্বীনের কথা শুনতে চায়না, আল্লাহর হুকুমের উপর চলতে চায়না, এমন মানুষদের সংশোধন, এমন লোকদের তরবিয়তের মসনুন তরিকা তাদেরকে দাওয়াতের জরিয়ায়, গাশ্ত ও দেখা-সাক্ষাতের মাধ্যমে মসজিদের পরিবেশে নিয়ে আসা, অতঃপর মসজিদের বিভিন্ন আমলের হালকায় বসানো। এটা সেই আমল যার উপর হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মতের তালিম ও তরবিয়তের বুনিয়াদ রেখেছেন। নবুয়তের জমানায় সাধারণভাবে এই সিলসিলা কায়েম ছিল যে সাহাবায়ে কেরাম মসজিদে নববির ভেতরে নির্দিষ্টভাবে হালকা লাগাইতেন। এবং হজরতে সাহাবায়ে কেরাম সফর করতেন এবং যে যে এলাকায় বিজয় লাভ করতেন এবং যারা দ্বীন ইসলামে প্রবেশ করত তাদের তালিম ও তরবিয়তের জন্য মসজিদ কায়েম করে সেখানে দাওয়াত ও তালিমের আমল চালু করতেন। এবং সে হালকাসমূহে তাদেরকে বসাতেন যেন তাদের আকিদা দুরস্ত হয়, তাদের জেহালত দূর হয়, তাদের ইমান শক্তিশালী হয়, এবং তাদের ভেতর থেকে যেন আখলাক ও মুয়াশারাতের সকলপ্রকার খারাবী দূর হয়ে যায়। নবুয়তের জমানা এবং খোলাফায়ে রাশেদিনের জমানা যদি আমরা দেখি তাহলে দেখব যে সকল মসজিদে সাধারণভাবে এরকম পরিবেশ কায়েম ছিল। সিরাতের কিতাবসমূহে এরকম ঘটনা অনেক রয়েছে।
হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মক্কার জমানায় তোফেয়েল ইবনে আমরে দোসি যিনি তখনও কাফের ছিলেন। মক্কার কাফেররা তাকে ভয় দেখাল, ধমক দিল এবং হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সাক্ষাত করতে ও উনার কথা শুনতে নিষেধ করল। তুমি ফেতনায় পরে যাবে। এত পরিমাণ ভয় দেখাল যে তিনি নিজের কানে তুলা ভরে দিলেন। যেন হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোনো কথা তার কানে না যায়। চিন্তা করে দেখেন কিভাবে তাকে হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ব্যাপারে ভয় দেখাল। কিন্তু যখন তিনি মসজিদে হারামে প্রবেশ করলেন তখন উনার মনে এই কথা আসলো যে আমাকে উনার কথা শুনা উচিৎ। হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মসজিদে হারামে নামাজের মধ্যে কোরআন তেলাওয়াত করছিলেন। এটা দেখে সে চিন্তা করল আমাকে তার কথা শুনা উচিৎ। আমিতো বুদ্ধিমান, ভাল-মন্দ বিচার করার ক্ষমতা আমার আছে। উনার কথা ভাল হলে কবুল করব নতুবা অস্বীকার করব। মসজিদের ভেতরে কদম রাখার সাথে সাথেই তার দিলে এই কথা পয়দা হয়। অর্থাৎ সমস্ত মক্কার কাফেররা তাকে দ্বীন থেকে বিমুখ করার জন্য যে মেহনত করেছিল, মসজিদে কদম রাখার সাথে সাথেই যেন তাদের মেহনতে পানি ঢেলে দিল। আপনারা আন্দাজ করে দেখেন আল্লাহর ঘরের প্রভাব কি রকম। সুতরাং যে হাত দিয়ে তিনি কানে তুলা ঢুকিয়েছিলেন সেই হাত দিয়েই তিনি সেই তুলা বের করে দিলেন। এরপর হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কালাম শুনতে থাকলেন, শুনতে থাকলেন। হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজ থেকে ফারেগ হওয়ার পরে তিনি কলেমা পরে দ্বীন ইসলামে দাখিল হয়ে গেলেন। তারপর এই হজরত তোফেয়েল ইবনে আমরে দোসি রা. নিজের দাউস গোত্রে গমন করলেন এবং প্রায় ১৫ বৎসর নিজের গোত্রকে ইনফেরাদি দাওয়াত দিতে থাকলেন এবং ৮০ টি পরিবার দ্বীন ইসলামে দাখিল হওয়ার জরিয়া বনে গেলেন। এই সবকিছু মসজিদের পরিবেশ এবং মসজিদের আমলের প্রভাব ছিল।
হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেদমতে বনু সাকিফের লোকেরা রমজান মাসে দ্বীন এবং ইসলাম কবুল করার জন্য হাজির হলেন। কিন্তু তারা শর্ত দিল যে তারা এক বৎসর মূর্তি পুজা পরিত্যাগ করবে না। হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে এক মাসের সুযোগ দিলেন। একটু আন্দাজ করে দেখেন তাদের অন্তর কত শক্ত ছিল। তারা আরো বলল যে তারা নামাজ পড়বে না। হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন ঐ দ্বীনের মধ্যে কোনো ভালাই নাই যে দ্বীনের মধ্যে রুকু নাই, নামাজ নাই। তারা আরো বলল যে তারা জাকাত দিবেনা আর রোজা রাখবেনা। এবং জিহাদ করবেনা। এরকম বুনিয়াদি হুকুমসমূহকে তারা অস্বীকার করল। আবার এটাও চাচ্ছে যে তারা দ্বীন ইসলামে দাখিল হবে। হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুঝতে পারলেন যে এখনও তাদের মধ্যে দ্বীনের উপর চলার যোগ্যতা পয়দা হয় নাই। সুতরাং হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সকল শর্ত মনে নিলেন এবং তাদের জন্য মসজিদের ভেতরে তাবু টাঙালেন। এবং অনেক এহতেমামের সাথে মসজিদের পরিবেশে রাখলেন। রেওয়ায়েতে আছে তাদেরকে মসজিদে রাখার হেকমত কি ছিল। তাদের অন্তর যে আল্লাহর হুকুম মানার ব্যাপারে শক্ত ছিল সেটা যেন মসজিদের পরিবেশে থেকে নরম হয়ে যায়। রেওয়ায়েতে আছে কিছু দ্বীন অতিক্রান্ত হওয়ার পর তারা রমজানের রোজা রাখা শুরু করে দিল। নামাজ পড়া শুরু করে দিল। দ্বীনের সকল ফরজ ও হুকুমসমূহ মানার জন্য ভেতর থেকে তৈরি হয়ে গেলেন। কোন জিনিষ তাদেরকে পরিবর্তন করেছে। সেটা মসজিদের পরিবেশের প্রভাব ছিল, সেটা ফেরেশতাদের পাখার প্রভাব ছিল। এমন জিদসম্পন্ন লোকদেরকে ইসলামের ফরজসমূহ মানার ব্যাপারে তৈরি করে দিল। কেয়ামত পর্যন্ত উম্মতের এমন তবকা প্রত্যেক জমানায়, প্রত্যেক জায়গায় পাওয়া যাবে। যারা আল্লাহর হুকুমসমূহ মানা থেকে দূরে থাকবে। তাদেরকে ইছলাহ ও তরবিয়তের সুন্নত তরিকা নবীর মাধ্যমে কেয়ামত পর্যন্ত নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। এমন লোকদের চিকিৎসা কেয়ামত পর্যন্ত নির্দিষ্ট আছে। তাদেরকে মসজিদের পরিবেশে এনে রাখ। তারা আল্লাহর হুকুমসমূহ মানার জন্য তৈরি হয়ে যাবে।
হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জমানায় এই অভ্যাস ছিল যে যদি কারো দ্বারা কোনো গুনাহ হয়ে যেত, শরীয়তের খেলাফ কোনো কাজ করে ফেলত, এবং শরীয়ত অনুযায়ী কোনো শাস্তি পাওনা থাকলে তাও শুনিয়ে দেয়া হত, এর পরেও তার তালীম ও তরবিয়তের জন্য, তার ভেতর থেকে ঐ গুনাহের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করার জন্য, তাকে মসজিদের পরিবেশে রাখা হত। এই কারণে হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চোরকে মসজিদের খুঁটির সাথে বেঁধে রাখতেন। বুখারি শরিফের রেওয়ায়েতে আছে, কাজী শুরাইহ রহ. এর ব্যাপারে বর্ণনা আছে যে তিনি ঋণগ্রস্ত লোকদেরকেও মসজিদের ভেতরে বেঁধে রাখতেন। এভাবে হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুমামা বিন আসসালকে মুশরিক অবস্থায় মসজিদের খুঁটির সাথে বেঁধে রেখেছেন। এবং তিন দিন পর্যন্ত প্রতিদিন তার সাথে এহতেমামের সহিত দেখা করে জিজ্ঞেস করতেন এখন তোমার ইচ্ছা কী। সে উত্তর দিত হয়তোবা আপনি আমাকে কতল করে দেন অথবা ফিদিয়া নিয়ে ছেড়ে দেন। কিন্তু তিন দিন পর্যন্ত সে দ্বীন ইসলাম কবুল করতে রাজীই হয়নি। হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটা চাইতেন যে অন্ততপক্ষে সে মসজিদের এই পরিবেশের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে দ্বীন ইসলাম কবুল করার জন্য তৈরি হয়ে যায়। যেমন কোনো হাসপাতালে ডাক্তার প্রতিদিন তার রোগীর খোঁজখবর নেয়, রোগীর অবস্থা কেমন আছে, খাওয়াদাওয়া কেমন চলছে, স্বাস্থ্যের কী অবস্থা। হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনিভাবেই তার সাথে প্রতিদিন এহতেমামের সাথে দেখা করতেন। মসজিদের পরিবেশ এবং এর ভেতরে দাওয়াতের হালকা চলতেছিল। আর খুঁটিতে একজন মুশরিককে আল্লাহর রাসুল বেঁধে রেখেছেন। এবং তিন দিন পর্যন্ত যেভাবে হাসপাতালের পরিবেশে ডাক্তার রোগীর খোঁজখবর নেয় ঠিক তেমনিভাবে তার খোঁজখবর নিচ্ছেন। বর্তমানে উম্মতের অগণিত তবকা, এবং তবকার অগণিত ব্যক্তি এমন রুহানি রোগে আক্রান্ত হয়ে গিয়েছে যে তাদের চিকিৎসা এই মসজিদের পরিবেশ ব্যতীত সম্ভব নয়। সুতরাং তিন দিন পর শুমামা বিন আসসালকে যখন ছেড়ে দেয়া হল তখন সে বাহিরে গিয়ে গোসল করে এসে কলেমা পড়ে দ্বীন ইসলামে দাখিল হয়ে গেলেন। এটাই হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সিরাত। উম্মতকে এটার উপরেই আনতে হবে। এটাই আমাদের দাওয়াত এবং মসজিদ আবাদির মেহনতের বুনিয়াদি সারকথা।
কোনো এলাকা অথবা দেশের মুসলমানদের আকীদা এবং তাদের মুয়াশারা, এলেম ও আমলের সেই স্তর হয়, যেই স্তর সেই এলাকার অথবা দেশের মসজিদের আমলের হবে। এত গভীর সম্পর্ক রয়েছে মুসলমানদের জীবনের এবং তাদের মসজিদের আমলের সাথে। যদি কোনো এলাকার মসজিদে দাওয়াতের আমল থাকে, আকিদার আলোচনার হালকা থাকে, এলেমের হালকা থাকে, হালাল-হারাম আলোচনার হালকা থাকে, এবং কোরআনের হালকা থাকে, তাহলে সেখানকার মুসলমানদের জীবনের আকীদা, মুয়ামালাত, মুয়াশারাত, এলেমের দ্বারা ভরপুর হবে। আর যদি মসজিদসমূহ ইমান এবং এলেমের হালকা থেকে খালি থাকে, দাওয়াতের আমল থেকে খালি থাকে, তাহলে সেই এলাকার মুসলমানদের জীবনের আকীদা সহি হওয়া, আখলাক ও মুয়ামালাত সহি হওয়া, এবং ইলমে এলাহি এদের জীবনে থাকা অসম্ভব। এজন্য হজরত উমর রা. এক প্রশ্নের মাধ্যমেই শাম দেশের মুসলমানদের অবস্থা যাচাই করে ফেললেন। ইবনে মুয়াবিয়া কিন্দি র. কে জিজ্ঞেস করলেন তোমাদের মসজিদসমূহের কী অবস্থা। আবার নিজেই বললেন আমার মনে হয় মানুষেরা বিক্ষিপ্ত জংলী উটের মত মসজিদে প্রবেশ করে আর যদি নিজের পরিচিত কারো হালকা মসজিদে দেখতে পায় সেখানে বসে নতুবা তারা বিক্ষিপ্ত জংলী উটের মত মসজিদ থেকে বাহির হয়ে যায়। ইবনে মুয়াবিয়া কিন্দি র. উত্তর দিলেন না আমিরুল মুমেনিন, আমাদের মসজিদসমূহে অগণিত হালকা কায়েম হয়ে থাকে এবং যারা মসজিদে আসে তারা এহতেমামের সাথে সেই হালকাসমূহে বসে। এটা শুনে হজরত উমর রা. বললেন যতদিন তোমাদের মসজিদসমূহে এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে, এবং মসজিদের হালকাসমূহের সাথে মুসলমানদের সম্পর্ক বজায় থাকবে ততদিন পর্যন্ত তোমরা খায়েরের উপর থাকবে। যতদিন লোকদের তাআল্লুক মসজিদের সাথে থাকবে ততদিন তোমরা খায়েরের উপর থাকবে। উম্মতের প্রত্যেক জমানায় সকল প্রকার খায়ের ও ভালাই টিকে রাখার জন্য মসজিদের আমলসমূহের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা।
মসজিদ ইমান এবং একীন সহি করার বুনিয়াদি জায়গা। আর বাজার ইমান এবং একীন নষ্ট হওয়ার বুনিয়াদি জায়গা। দুইটা বড়ো ধরণের কেন্দ্র। একটা মসজিদের পরিবেশ আরেকটা বাজারের পরিবেশ। শয়তান সকল প্রকার ফেতনা ফাসাদ, কুফর আর শিরিক ছড়ানোর বাজারকে আড্ডা বানিয়েছে আর সেখানেই নিজের তাবু টাঙিয়েছে। আর সেখানেই নিজের পতাকা উড়িয়েছে। আর সেখান থেকেই প্রতিদিন নিজের বাহিনী আর জামাতকে পুরা আলমে পাঠায়। আর প্রতিদিন তাদের কারগুজারী শুনে। এর মোকাবিলায় আল্লাহ তাআলা সর্বোৎকৃষ্ট জায়গা বানিয়েছেন যার সাথে সম্পর্ক গড়ে তুললে সে আল্লাহ্‌ তাআলার মাহবুব বান্দা বনে যায়, সেটা হচ্ছে মসজিদের পরিবেশ। কেয়ামত পর্যন্ত দুইটা বুনিয়াদি জায়গা। হযরতজী ইউসুফ সাব রহঃ বলতেন আমাদের মেহনতে এক ঘন্টা, দেড় ঘন্টা, আড়াই ঘন্টার কোন মাসলা নেই। আমাদের এখানে আড়াই ঘন্টার কোনো দাওয়াত নেই। বরং বলতেন আড়াই ঘন্টার দাওয়াত মসজিদগুলোকে অফিস বানিয়ে ফেলেছে। বরং বলতেন একজন মুসলমান একদিনে যত ঘণ্টা বাজারে, খারাবীর পরিবেশে, শয়তানী আড্ডায় কাটায়, যার ফলে তার ইমান এবং একীনে খারাবী আসছে। ঠিক তত ঘণ্টা তার জন্য মসজিদে অবশ্যই দিতে হবে। এছাড়া এই উম্মতের তরবিয়তের আর কোনো রাস্তা নেই। যদি বাজারে ছয় ঘণ্টা কাটায়, বাজারে বসে দুনিয়ার আসবাবসমূহকে চোখ দিয়ে দেখে, তাহলে সেই দিন মসজিদের পরিবেশে ছয় ঘণ্টা কাটাতে হবে। যাতে সেই একীন দুরুস্ত হয়ে যায় যেটা বাজারের পরিবেশে থেকে নষ্ট হয়েছে।
হযরতজী মাওলানা ইউসুফ সাব রহঃ বলতেন, এই মেহনত, গাশ্ত ও দেখা-সাক্ষাতের বুনিয়াদি মাকসাদ, আর এই কাজের মধ্যে প্রথম কদম আর প্রথম সিঁড়ি হচ্ছে প্রত্যেক মুসলমানের দিলের গভীরতায় একথার একীন জমে যে প্রত্যেক সমস্যার সমাধান মসজিদের মধ্যে রয়েছে। এটাই সবচেয়ে বুনিয়াদি কথা। দুই, আড়াই ঘণ্টা, আট ঘণ্টার ফলাফলে এক এক জন মুসলমানের আল্লাহর ঘরের সাথে সম্পর্ক, আল্লাহর উঁচু সত্তার সাথে সম্পর্ক, এবং আল্লাহর খাজানা হতে সরাসরি নেয়ার মেজাজ বনে যায়। প্রথম যুগে সাহাবা এবং মুসলমানদের মসজিদের সাথে এমন গভীর ছিল এবং আল্লাহর খাজানা থেকে নেয়ার এমন পরিবেশ বনে গিয়েছিল যে সেই যমানায় মানুষতো মানুষ, জীবজন্তু পর্যন্ত, জঙ্গলের পশুপাখি, যাদের কোনো শরীয়ত নেই। তারা পর্যন্ত তাদের রুটি রুজির সমস্যা সমাধান করার জন্য মসজিদে চলে আসত। সহি রেওয়ায়েতে আছে, হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক নামাজ থেকে ফারেগ হওয়ার পরে মসজিদে বসে ছিলেন। জঙ্গল থেকে একশত বাঘ সকল বাঘের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি হয়ে মসজিদে এসে এমনভাবে বসে গেল যেমন সাহাবারা বসতেন। হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখে সাহাবাদের বললেন এই বাঘেরা তাদের রুটি রুজির সমস্যা সমাধান করার জন্য মসজিদে এসেছে। বল তোমাদের কি মতামত। সাহাবারা বললেন আপনি যা সিদ্ধান্ত নিবেন আমরা টা মেনে নিব। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তোমাদের যাদের কাছে বকরীর পাল আছে সে পাল হতে বছরে একটি বকরী তাদেরকে দিয়ে দিবে। এটা শুনে সাহাবারা নিজেদের অভাবের অভিযোগ করলেন। নিজেদের পেরেশানির কথা বললেন। এরপর হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনটি আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করে বাঘদের বললেন তোমরা হামলা করে বকরীর পাল হতে তোমাদের প্রয়োজন পরিমাণ রুজি নিয়ে নিবে। আর সাহাবাদেরকে বললেন তোমরা তোমাদের বকরীর পালগুলোকে হেফাজত করবে। জানোয়ার, জঙ্গলের হিংস্র প্রাণী, তাদের প্রয়োজন পুরন করার জন্য তারা মসজিদে এসেছে, তাহলে আপনারা বলেন সে যুগের মুসলমান কি তাদের রুটি রুজির সমস্যা নিয়ে কোনো অফিসে কি যেতে পারে। তারা কি পরিমাণ মসজিদে সময় দিতেন, প্রত্যেক সমস্যা সমাধানের জন্য সাহাবারা মসজিদে আসতেন। এটা কখন হবে যখন এই মসজিদের হালকাগুলোর দ্বারা একেকজনের একীন দুরুস্ত হবে, আল্লাহর সাথে সম্পর্ক পয়দা হবে, তখন সে সকল সমস্যাকে নিয়ে মসজিদে হাজির হবে। এটাই আমাদের দেখা-সাক্ষাতের, গাশ্তের, মসজিদ আবাদীর বুনিয়াদি মাকসাদ।
এর জন্য গাশ্ত ও দেখা-সাক্ষাতের মাধ্যমে উম্মতের প্রত্যেক ব্যাক্তিকে মসজিদ এবং মসজিদের আমলের সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি করা এটাই বুনিয়াদি সারকথা। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা, হজরত উমর, মুয়াজ ইবনে জাবাল, এবং হজরত আবু হোরায়রা রাদি. সহ অন্যান্য সাহাবারা সাহাবাদের উপর গাশ্ত করে এক এক সাহাবীর হাত ধরে বলতেন, আস, চল, মসজিদে বসে আমরা আমাদের ঈমানকে তাজা করি। আর আমরা কিছুক্ষণ ঈমান নিয়ে আসি। আমাদের সকল গাশ্ত ঈমানের পরিপূর্ণতার বুনিয়াদি মাধ্যম। যে মসজিদে চলে এসেছে, আমাদের বুনিয়াদি জিম্মাদারি হচ্ছে তাকে ভাল মত এস্তেকবাল করা, তাকে অজু করিয়ে, যদি গোসলের প্রয়োজন হয়, গোসল করিয়ে, প্রয়োজনে কাপড় পরিবর্তন করিয়ে তাকে সেই সময়ের ফরজ হুকুমকে আদায় করার জন্য তৈরি করা। আমাদের গাশ্তের সারকথা হচ্ছে তাকে ফরজের উপর আনতে হবে। সাহাবাদের সিরাতেও রয়েছে যারাই দ্বীনে প্রবেশ করত তাদেরকে ফরজের উপর উঠানো হত। সর্বপ্রথম তাদেরকে নামাজের তালিম দেয়া হত। নামাজ থেকে ফারেগ হওয়ার পর ঈমানের হালকায় বসাতে হবে। তার আকীদা ঠিক করতে হবে, তাকে বুনিয়াদি ফরজসমূহের তালীম দিতে হবে। যদি কলেমা পড়তে না পারে তাহলে কলেমার শব্দগুলো ঠিক করাতে হবে। আপনি চিন্তা করেন যে হজরত আব্বাস রা., হজরত আবু সুফিয়ানকে কলেমা পড়াতে চাচ্ছেন। কিন্তু তার মুখে কলেমা আসতেছিলনা। রাত্রভর মেহনত করলেন যেন তার কলেমার শব্দগুলো ঠিক হয়ে যায়। এটা বুনিয়াদি সুন্নত যে প্রথমে কলেমা ঠিক করি, পড়ে ফরজ হুকুমসমূহের তালীম দেই। সাথে সাথে তাকে দাওয়াত দিয়ে মসজিদের আমলের জন্যও তৈরি করি। প্রতিদিন নিজের পক্ষ থেকে ৮ ঘণ্টার তাশকিল করি, আর যে যতটুকু সময় মসজিদে দেয়ার জন্য তৈরি হয়ে সেটা কবুল করি। অতঃপর আল্লাহর রাস্তায় লম্বা সময় এবং দূরে সফর করার জন্য, দেশে-বিদেশে, পুরুষ জামাতে, মাস্তুরাত জামাতে বের হওয়ার জন্য তাকে তাশকিল করি। সবচেয়ে উঁচু দরজা হচ্ছে প্রত্যেক উম্মতিকে প্রত্যেক বছর চার মাস আল্লাহর রাস্তায় লাগানোর জন্য তৈরি করা। আরেকটা বুনিয়াদি তাশকিল করতে হবে সে যেন নিজেকে এবং তার সন্তানদের মকতবে পাঠায়। মকতব কায়েম করা এবং সকল উম্মতকে মকতবের সাথে জুড়ানো এটা আমাদের আকাবিরদের মেহনতের খোলাসা। উম্মতের প্রত্যেক তবকার রুহানি রোগের চিকিৎসা এগুলোই। প্রথম যুগে নবুয়তের জমানায় এটাই মাসনুন তরিকা যে উম্মতকে আকিদার এবং বুনিয়াদি ফরজসমূহের তালীম মসজিদের পরিবেশে, ওলামাদের সোহবতে, কিতাব ব্যাতীত তাদেরকে নিজের আমলের মাধ্যমে তালীম দেয়া হত। আর চতুর্থ বুনিয়াদি তাশকিল হচ্ছে নিজের ঘরের মধ্যে দাওয়াতের আমল কায়েম করা। নিজের ঘরের মধ্যে পাঁচ আমলের সাথে তালীম চালু করা। এই চারটা বুনিয়াদি তাশকিল যা আমাদেরকে একেক উম্মতকে করতে হবে।
ঘরের ভেতরে তালীম এবং এর মধ্যে কোরআন ও হাদিসের হালকা, এটা এই উম্মতের মহিলা এবং বাচ্চাদের তালীম ও তরবিয়তের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে ব্যবস্থা। কোরআনের হালকা নিজের ঘরের ভেতরে কায়েম করা এটা আল্লাহর হুকুম। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র বিবিদেরকে আল্লাহ্‌ বলেছেন, নিজের ঘরের মধ্যে কোরআন এবং হেকমত কায়েম কর। কোরআন মনে রাখ, চর্চা কর, কোরআনের আলোচনা কর। আল্লাহর হুকুমের কারণেই ঘরের মধ্যে কোরআনের হালকা এবং আল্লাহর হুকুমের কারণেই ঘরের মধ্যে হাদিসের হালকা কায়েম করতে হবে। মুফতি শফী সাব রহ. তাফসীরের কিতাবে উল্লেখ করেছেন, এই হুকুম শুধুমাত্র হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র বিবিদের জন্য খাস নয় বরং প্রত্যেক জমানায় প্রত্যেক মহিলাদের জন্য সাধারণভাবে এই হুকুম। এই জন্য সকল জমানার সকল মা-বোনদের জন্য এটা কর্তব্য যে তারা যেন আল্লাহ্‌র হুকুম মনে করে, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত মনে করে, এবং এর ভেতরে নিজের তরবিয়তের একীন মনে করে নিজের ঘরের মধ্যে কোরআন ও হাদিসের হালকা কায়েম করে।
ঘরের তালীমের দ্বারা আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে কেয়ামত পর্যন্ত তরবিয়ত ও সংশোধনের ওয়াদা রয়েছে। আল্লাহ্‌ তাআলা ওয়াদা করেছেন যে এই আমলসমুহের মাধ্যমে গুনাহের দুর্গন্ধ ও অপবিত্রতা দূর করে তোমাদেরকে পরিপূর্ণ পবিত্র করে দিবেন। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত এই আমল সমূহ কে পবিত্র করার আমল হিসেবে অভিহিত করেছেন। ঘরের মধ্যে কুরআন এবং হাদিসের হালকা কায়েম করার দ্বারা আল্লাহতালা বান্দার সংশোধন এবং আত্ম পরিশুদ্ধির ব্যবস্থা করবেন। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত হযরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু কে শুধুমাত্র নিজের কুদরতের দ্বারা পবিত্র করেছেন। কুফর এবং শিরিকের দুর্গন্ধ এবং নাপাকি থেকে পবিত্র করেছেন। এক তালিমের হালকার বরকতে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর ভেতর থেকে সকল প্রকার কুফর এবং শিরিকের প্রভাব দূর হয়ে গিয়েছে। উমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু তার বোনকে সারারাত মারপিট করলেন। মারপিট করার আগে তার বোন সুরা ইকরা পড়তেছিল। মারপিট করার পরে যখন ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু ঘুমিয়ে পড়লেন। ঘুম থেকে উঠে দেখলেন তার বোন আবারো সূরা ইকরা পড়ছে। সকাল সকাল তার কানে কোরআনের বানী প্রবেশ করেছে। এর দ্বারাই তার অন্তর পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। যাদেরকে আল্লাহতালা পূর্ব থেকেই ঈমান এবং ইসলামের দৌলত দিয়ে রেখেছেন তারা যদি নিজেদের ঘরের মধ্যে কুরআনের হালকা কায়েম করে তাহলে তাদের কত তরবিয়ত হবে কত সংশোধন হবে।
হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সারা জীবনের অভ্যাস সিরাতের কিতাবে পাওয়া যায়, এবং হাদিসের কিতাবসমূহে পাওয়া যায় যে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কখনো ঘরে তালিমের হালকা বাদ দেননি। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালা করে একেকজন বিবি সাহেবানদের ঘরে থাকতেন। যখন যে বিবির ঘরে পালা আসতো সে বিবির ঘরে প্রবেশ করা হতে বাহির হওয়া পর্যন্ত ঘরের মধ্যে তালিমের হালকাই কায়েম থাকতো। ২৩ বছরের জীবনে, মদিনার জীবনে যখনই যে বিবির ঘরে তিনি থাকতেন সেই বিবির ঘরে তালিমের হালকা কোরআনের হালকা কায়েম করতেন। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরের মধ্যে অত্যন্ত এহতেমামের সাথে তালিম করতেন। নবুয়তের আমলে এবং দাওয়াতের আমলে সর্বপ্রথম আমল যার দ্বারা হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের নবুয়তের মেহনত কে শুরু করেছেন সেটা হচ্ছে ঘরের ভেতরে কোরআন এবং হাদিসের হালকা কায়েম করা। সিরাতের কিতাব সমূহে এর পূর্বে আর কোন আমল দেখা যায় না। আপনি হেরা গুহায় ছিলেন সেখানে আপনার উপর ওহী নাজিল হয়েছিল। এবং সম্পূর্ণ ঘটনা ব্যাখ্যা সহকারে কিতাবের মধ্যে আছে। আপনি সেই আয়াতকে নিয়ে সেই ওহীকে নিয়ে আপনি না কোন শত্রুদের কাছে গিয়েছেন, না কোন বন্ধুদের কাছে গিয়েছেন। মসজিদে যান নি। বরং আপনি সোজা সেই আমলগুলোকে নিয়ে হযরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহার কাছে গেলেন। ঘরে গিয়ে যখন আপনি শান্তি পেলেন তখন হীরা গুহার সমস্ত ঘটনা তিনি খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে শোনালেন। এবং উনাকে সূরা ইকরার ওই সমস্ত আয়াতগুলো পড়ে শোনালেন যা প্রথম ওহীতে নাজিল হয়েছিল। যদি আমরা বুখারী শরীফ খুলে এই ঘটনা পড়ি তখন আমরা বলি যে এটা বুখারীর দরস চলছে। হাদিসের হালকা চলছে। আর আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে জবান মোবারকের দ্বারা নিজের সমস্ত কেচ্ছা হযরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে শোনালেন , এটা কি হাদিসের হালকা হবে না। এটা কি ঘরের তালিম হবে না। নিজের বিবিকে নিয়ে ঘরে হাদিসের হালকা কায়েম করা এবং সেখানে কোরআনের আয়াত শোনানো, এটা কি হাদিসের হালকা হবে না এটা কি কোরআনের হালকা হবে না। নিঃসন্দেহে এটা হাদিসের হালকা এবং এটা কোরআনের হালকা। এবং এই ধারাবাহিকতা আপনার পুরা জীবনে পাওয়া যায়।
হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি দিনের বেলা ঘরে আসার সুযোগ না পেতেন এবং যদি আপনি ক্লান্ত থাকতেন, আপনি ঘরে আরাম করার পরে রাত্রে যখন জেগে উঠতেন তখনই হালকা বানিয়ে ফেলতেন। হযরত উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত যে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে তশরিফ আনলেন এবং যখন রাত্রে জেগে উঠলেন। উঠেই তিনি এই হাদিস বয়ান করলেন আজকে রাত্রে অনেক ফিতনার জিনিস এসেছে এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে অনেক খজানাও এসেছে। এরপর বললেন অনেক মহিলা দুনিয়াতে কাপড় পরিধান করবে কিন্তু আখেরাতে বিবস্ত্র অবস্থায় উঠবে। কেউ কি আছে এই ঘুমন্ত মহিলাদেরকে জাগিয়ে দেয় যেন তারা রাত্রে এবাদত করে। এটা কি ছিল। হযরত উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহার সাথে রাত্রে বেলায় হাদিসের হালকা কায়েম করা। ইমাম বুখারী রহমতুল্লা আলাইহি বুখারী শরীফে রাতের বেলায় এলেন অধ্যায়ন করা অধ্যায়ে এই হাদিস এনেছেন। আর আমরা দিনের কত তাগাদায় ব্যস্ত থাকি। যতই ব্যস্ত থাকি না কেন রাতের বেলা বাসায় ফিরে বিবি বাচ্চাদেরকে নিয়ে ঘরে তালিমের হালকা কায়েম করা এটা হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। ইহা ব্যতীত আমাদের দ্বীনের মেহনত অসম্পূর্ণ। আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কত গুরুত্বের সাথে যখন তিনি ঘরে আসছেন নিজের বিবির সাথে হাদিসের হালকা কায়েম করছেন তাহলে এই উম্মতের জন্য এর চেয়ে বড় আর কি সুন্নত হতে পারে। পুরা মজমা আজম এবং এরাদা করি যে আমরা যতই ক্লান্ত হই না কেন এবং যতই বাহিরের তাকাযা পুরা করি না কেন কিন্তু প্রতিদিন এতে ইহতেমামের সাথে ঘরে এসে তালিমের হালকা কায়েম করব। ইনশাআল্লাহ।
ঘরের ভেতরে তালিমের জন্য সময় নির্দিষ্ট করা এবং সেই নির্দিষ্ট সময়ে নিজে উপস্থিত থাকা। অতঃপর ঘরের সবাইকে হাজির করা, যে উপস্থিত নয় তাকেও ডাক দেওয়া। এরপরে হাদিসের হালকা কায়েম করা। এসব কিছু সিরাত থেকে প্রমাণিত। মুসলিম শরীফের রেওয়ায়াতে হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব বিবিদেরকে একত্রিত করে এরশাদ ফরমান আমার মৃত্যুর পরে আমার সাথে সর্বপ্রথম সেই বিবির সাক্ষাৎ হবে যার হাত সবচেয়ে লম্বা হবে। ইহা শোনার পরে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিবিগণ নিজেদের হাত মাপা শুরু করলেন। পরে জানা গেল এর অর্থ হচ্ছে সবচাইতে বেশি সদকা খয়রাত যিনি করেন। এবং তিনি হচ্ছেন হযরত জয়নাব রাদিয়াল্লাহু আনহা। তিনি নিজের হাতে যা কিছুই আসতো সবকিছুই সদকা খয়রাত করে দিতেন। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে এসে সব বিবিদেরকে একত্রিত করে হালকা বানালেন। যে উপস্থিত ছিল না তাকেও ডেকে আনলেন। হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন যে তিনি নিজে সব বিবিদেরকে একত্রিত করেন। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন হযরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহা কোথায়। অতঃপর ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহু উপস্থিত হলেন এরপরে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিস বর্ণনা করলেন। হালকা চলাকালীন হযরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহা কে নিকটে নিয়ে আসলেন এবং ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহার কানে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি হাদিস বয়ান করলেন যা শুনে ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা কান্না আরম্ভ করলেন। আবার পুনরায় ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহার কানে আরেকটি হাদিস বয়ান করলেন যা শুনে ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা হেসে দিলেন। পরবর্তীতে হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞেস করলেন যে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমার কানে কোন হাদিস বর্ণনা করেছেন যা শুনে তুমি একবার কান্না করলে আবার হেসে দিলে। ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন এটা তো আল্লাহর নবীর রহস্য। এটা বলা যাবে না। যখন হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকাল হয়ে গেল হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বললেন আমি যে তোমার মা হই এই হক মনে করে আমাকে সে হাদীসটি শুনিয়ে দাও যা তোমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কানে কানে বলেছিলেন। কত শখ, কত জজবা একটা হাদিস শোনার জন্য। আজকে হাদিস শোনার জন্য সেরকম শখ এবং জজবা আমাদের ভিতর নেই। যদিও বর্তমানে হাদিসগুলো কিতাব আকারে আমাদের কাছে রয়েছে। হযরত ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা আম্মাজান আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহাকে শোনালেন যে আমাকে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমবার আমার কানে কানে বললেন প্রত্যেক বছর জিব্রাইল আলাই সালাম আমাকে একবার পুরা কোরআন শোনান কিন্তু এই বছর আমাকে পুরা কোরআন দুইবার শুনান। এটা এই বিষয়ের আলামত যে আমার এই পৃথিবী থেকে বিদায়ের সময় অত্যন্ত নিকটবর্তী। এটা শুনে আমি কান্না করা আরম্ভ করে দিলাম যেটা আপনি দেখেছিলেন। দ্বিতীয়বার হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কানে কানে বললেন যে ফাতেমা তুমি কি এই বিষয়ে সন্তুষ্ট নয় যে তোমাকে বেহেশতে মহিলাদের সরদার বানিয়ে দেয়া হয়। এটা শুনে আমি হেসে দিয়েছিলাম। এখন আপনারা চিন্তা করে দেখেন তালিমের হালকা কায়েম করার জন্য সবাইকে একত্রিত করলেন, মেয়ে উপস্থিত নেই, তাকেও ডেকে আনলেন। এরপরে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিস বর্ণনা করলেন। এটাই সুন্নত তরিকা। এই উম্মতের সকল ব্যক্তি, সাধারণ মানুষ, আলেম-ওলামা সবার জন্য কিয়ামত পর্যন্ত একটাই মসনুন তরিকা যে নিজের ঘরে এসে এভাবেই তালিম করে। এই ঘরের তালিম নকল হতে হতে পরে সহীহ মুসলিমের একটি হাদিস হয়ে যায়। এ সকল হাদিসগুলো বিভিন্ন হাদিসের কিতাবে একত্রিত হওয়ার পূর্বে ঘরে ঘরে তালিম হত। এজন্য সবাই নিয়ত করি আমরা এহতেমামের সাথে ঘরের সবাইকে একত্রিত করে ঘরের মধ্যে রোজানা তালিম করব। কুরআনের হালকা করবো, হাদিসের হালকা করবো, ছয় সিফতের মুজাকারা, তাশকিল এবং পরবর্তী দিনের তিন আমলের মাশওয়ারা। কে কোরআনের মশ্ক করাবে, কে কিতাবে তালিম করবে এবং কে ছয় সিফাতের মুজাকারা করবে। একদিন মুন্তাখাব হাদিস কিতাবের তালিম হবে আরেকদিন ফাজায়েলে আমল এবং ফাজায়েলে সাদাকাত এর তালিম হবে।
চলবে……………

খলিফা/আমির নির্ধারনের পদ্ধতি সমূহ:-

এটাই বাস্তবতা যে তবলীগ জামাতের প্রায় ৮০% পুরানো সাথীরা বিশ্ব মার্কাজ নিজামুদ্দীনের অধিনে মাওলানা সাদ সাহেবকে আমীর হিসেবে মেনে নিয়ে তার কাছে বাইয়াতও হয়েছে।
আবার এটাও সত‍্য যে তবলীগী যত কার্যক্রম আছে তার সবটাই উসুল হিসেবে রাসুল সাঃ ও সাহাবাদের জিন্দেগি থেকে নেওয়া। সেটা হতে পারে খুরুজ ফি সাবিলিল্লাহ,ঘর ঘর দাওয়াত,মাসজিদ ভিত্তিক পাচঁ আমল,মাসজিদ আবাদ ইত্যাদিসহ আমীর নিযুক্ত করার মত সব গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

কিন্তু অনেকে মাওঃ সাদ সাহেবসহ নিজামুদ্দীন মার্কাজকে বিতর্কিত করতে গিয়ে প্রশ্ন করে যে মাওলানা সাদ সাহেব কিভাবে আমীর হলেন ??
আসলে এই বিষয়টা তারা যারা প্রশ্ন করে থাকে খুব ভালো করেই জানে। তারপরও এই রকম প্রশ্ন করে ফেতনা ছড়াতে চায়।
যদি বলা হয় তিনি 2015 সালে অল ইন্ডিয়া জোড়ে আমীর হিসেবে সবাই ফয়সালা করছে ত এটা তারা মানতে চায় না।
আবার 2017 সালে বিশ্ব ইজতেমায় মাও ফারুক সাহেবের ফয়সালায় পুড়া বিশ্বের আমীর হইছেন তাও ফেতনাকারীরা অস্বীকার করে থাকে।

এই ভিডিওতে মাওঃ আরীফ বিন হাবিব (যিনি কউমিয়াঙ্গনে একজন নির্ভরযোগ‍্য আলেম) খলিফা বা আমীর নির্ধারণের পদ্ধতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে চারটা পদ্ধতির কথা বলেন।

এখানে একটা বিষয় সুস্পষ্ট যে মজলিসে শুরা গঠনের মাধ‍্যমে ঐ শুরাদের মধ‍্য হতে একজনকে আমীর বা জনগণের অভিজ্ঞ বা যোগ‍্যতা সম্পন্ন অংশ এক ব‍্যক্তির কাছে বয়াত হলে ঐ ব‍্যক্তিও আমীর হয়ে যাবে এবং আস্তে আস্তে সবাই তার কাছে বাইয়াত হবে।
মাওলানা সাদ সাহেব ঐ দশ জন মজলিসে শুরার সদস‍্য যাদেরকে তবলীগের তৃতীয় আমীর গঠন করে যান এবং এদের মধ‍্য হতে একজনকে আমীর নিযুক্তের নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে তিনজনকে আমীরে ফয়সাল বানানো হয় যার ফয়সালা দেন মিয়াজি মেহরাব রাহঃ।

উমর রাঃ যে শুরা গঠন করেছিলেন আলী রাঃ জীবিতদের মধ‍্যে তিনি ছিলেন শেষ ব‍্যক্তি।
আবার তারই হাতে উম্মতের কিছু অভিজ্ঞ ব‍্যক্তিরা বাইয়াত গ্রহণ করলে উনাকে খলিফা হিসেবে সবাই মেনে নেয়।

এই উভয় পদ্ধতিতে সাদ সাহেব তবলীগী জামাতের আমীর হওয়া সত্ত্বেও ফেতনাবাজরা উনার বিরোধীতা করেই যাচ্ছে। কারণ সাদ সাহেব ঐ ব‍্যক্তি যিনি তিন জনেরও শেষ ব‍্যক্তি আবার ঐ দশ জনেরও মধ‍্যেও শেষ ব‍্যক্তি।
যদি কেউ বলে সাদ সাহেব আমীর কেমনে হইছে। ত একই ভাবেত এর উত্তর আলী রাঃ কেমনে আমীর হইছে ??

তবে ভাই যতই আপনি দলিল পেশ করেন না কেন শেষ জামানার ফেতনাবাজরা কখনোই সাদ সাহেবকে আমীর মানবে না।কারণ তারা হলো বোখারীর ঐ হাদীসের বাস্তব রুপ যাদের ব‍্যাপারে হাদীসে স্পষ্ট বর্ণনা করা হয়েছে যে তারা আমীরকে অস্বীকার করবে।তারা সবকিছুই অনুসরণ করবে আবার আমীর থাকার বিরোধীতাও করবে( আমীর যেই হোক মানা না মানা তার ব‍্যাপার তবে কেউ যদি আমীরের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করে?? এদের ব‍্যাপারেই এই হাদীস)।।।।

হুযাইফাহ ইব্‌নু ইয়ামান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, লোকেরা রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – কে কল্যাণের বিষয়াবলী জিজ্ঞেস করত। কিন্তু আমি তাঁকে অকল্যাণের বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতাম এ ভয়ে যে, অকল্যাণ আমাকে পেয়ে না বসে।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমরা তো জাহিলীয়্যাত ও অকল্যাণের মাঝে ছিলাম। এরপর আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদেরকে এ কল্যাণের মধ্যে নিয়ে আসলেন। এ কল্যাণের পর আবারও কি অকল্যাণ আসবে?
তিনি বললেন, হ্যাঁ। তবে এর মধ্যে কিছুটা ধূম্রজাল থাকবে। আমি প্রশ্ন করলাম, এর ধূম্রজাল কিরূপ? তিনি বললেনঃ এক জামা‘আত আমার তরীকা ছেড়ে অন্য পথ ধরবে। তাদের থেকে ভাল কাজও দেখবে এবং মন্দ কাজও দেখবে।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, সে কল্যাণের পর কি আবার অকল্যাণ আসবে?
তিনি বললেন, হ্যাঁ। জাহান্নামের দিকে আহ্বানকারী এক সম্প্রদায় হবে। যে ব্যক্তি তাদের আহ্বানে সাড়া দেবে, তাকে তারা জাহান্নামে নিক্ষেপ করে ছাড়বে। আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! তাদের কিছু স্বভাবের কথা আমাদের বর্ণনা করুন। তিনি বললেনঃ তারা আমাদের লোকই এবং আমাদের ভাষায়ই কথা বলবে।
আমি বললাম, যদি এমন অবস্থা আমাকে পেয়ে বসে, তাহলে কী করতে হুকুম দেন? তিনি বললেনঃ মুসলিমদের জামা‘আত ও ইমামকে আঁকড়ে থাকবে। আমি বললাম, যদি তখন মুসলিমদের কোন (সংঘবদ্ধ) জামা‘আত ও ইমাম(আমীর) না থাকে?

তিনি বললেনঃ তখন সকল দলমত ত্যাগ করে সম্ভব হলে কোন গাছের শিকড় কামড়িয়ে পড়ে থাকবে, যতক্ষণ না সে অবস্থায় তোমার মৃত্যু উপস্থিত হয়
।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৯১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬০৫)

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

এক দারুল ইফতার প্রধান মুফতীর নজরে মওজুদা তাবলীগি এখতেলাফ:-

যখন মুসলমান এর মাঝে কোন বিষয়ে মতপার্থক্য দেখা দেয় তখন প্রতিটি বিবেকবান মুসলমানের জন্য জরুরী সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে যাচাই-বাছাই বা তাহক্বীক করা । সেই ধারাবাহিকতায় অধমের মামুল ছিল তাবলীগের বর্তমান এখতেলাফের বিষয়ে যে কোন ওলামায়ে কেরামের কাছ থেকে সঠিক বিষয় উদঘাটন করা। তাই যখনই যেখানে যে কোন ওলামায়ে কেরামকে পাওয়া গেছে তখনই সেখানে ওলামাদের খেদমতে ছুটে যাওয়া হয়েছে এই বিষয়ের তাহক্বীক করার জন্য যে মাওলানা সাদ সাহেবের বিষয়ে যে সকল বক্তব্য শোনা যাচ্ছে তা কতটুকু সঠিক এবং বাস্তবসম্মত? এমনিভাবে তাবলীগের এক সফরে যখন নওগাঁ সফর করার সুযোগ হয় তখন মনে হল নওগা‌তে তো বাংলাদেশের প্রাচীন পুরানো মাদ্রাসা আল-জামিয়া আল-আরাবিয়া দারুল হিদায়াহ, পোরশা, অবস্থিত এবং সেখানে বড় দারুল ইফতা রয়েছে। তাই তৎক্ষণাৎ ছুটে গেলাম দারুল ইফতায় এবং জিয়ারতে হাজির হলাম দারুল ইফতার প্রবীন ও প্রধান মুফতী আ‌বিদুর রহমান সাহেবের খেদমতে। যার তাবলীগের কা‌জের সাথেও রয়েছে গভীর সর্ম্পক। যিনি তাবলীগে ১ সাল সময়ও লাগিয়েছেন। হযরতের খেদমতে হাজির হতেই হযরত অনেক আন্তরিকতার সাথে ইস্তেকবাল করে নিজের কাছে বসালেন। পরিচয় পর্ব ও কুশলাদি থেকে ফারেগ হওয়ার পর হযরতকে জিজ্ঞাসা করলাম বর্তমানে সাদ সাহেবের বিষয়ে যে সমস্ত কথা শোনা যাচ্ছে এ ব্যাপারে আপনার কি মতামত? আমরা তো পূর্ব থেকেই নিজামুদ্দিন মারকাজ এর সাথে জুড়ে ছিলাম এবং মাওলানা সাদ সাহেব কে নিজেদের জিম্মাদার হিসেবে তাবলীগের কাজ করছিলাম। কিন্তু এখন তার কাছ থেকে যে নিজের সম্পর্ককে বি‌চ্ছিন্ন করব তার জন্য তো কোন সুনির্দিষ্ট দলিল খুঁজে পাচ্ছি না। সকলে শুধু একটাই কথা বলে, সব ওলামায়ে‌কেরাম কি না জেনে না বুঝে বলছেন? এরপরও কি আপনার বোঝার কিছু বাকি থাকে? কিন্তু আমি আসলে সুনির্দিষ্ট কোন কারণ খুঁজে পাই না যার দ্বারা আমি নিজামুদ্দিন এবং মাওলানা সাদ সাহেব থেকে নিজের সম্পর্ককে কেটে দিব। আপনি কি মেহেরবানী করে আমাকে এমন কোন নিদৃষ্ট কারন বলবেন? যার কারনে নিজামুদ্দিন এবং মাওলানা সাদ সাহেবের অনুসরণ করা যাবে না। তিনি বললেন মাওলানা এসব এখতেলাফি বিষ‌য়ে আলোচনা না হয় নাইবা করলাম। আমি বললাম হুজুর আমি অনেক আশা নিয়ে এসেছি। আপনি একজন দারুল ইফতার প্রধান মুফতি। সুতরাং নিশ্চয়ই আপনি কোরআন হাদিসের আলোকে সাদ সাহেবের বিষয়গুলো আমাকে সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে বলতে পারবেন। তিনি তখন এক আজিব জবাব দিলেন। যা এখানে মূলত সবার সামনে পেশ করা উদ্দেশ্য। তিনি বললেন দেখেন মাওলানা আজ সাদ সাহেবের বিষয়ে যত এখতেলাফ এবং কথা উঠছে এ সমস্ত কথা হযরতজী মাওলানা ইউসুফ সাহেব রহমাতুল্লাহ এর বেলায় উঠেছিল। কিন্তু তখনকার জমানার সাথে এ জমানার মূলত দুটি পার্থক্য হয়ে গেছে। প্রথমত ওই সময় ইউসুফ রহমাতুল্লাহ আলাইহির বয়ানাত এবং কথাবার্তার উপরে যখন এখতেলাফ দেখা দিত তখন তা নিয়ে এত হইচৈই এবং সমা‌লোচনা হতো না এর কারণ ছিল হজর‌তের প‌রি‌চি‌তি এবং ব‌্যা‌ক্তি‌ত্বের প্রভাব এত বেশী ছিল যে কেউ হজর‌তের খেলাফ কথা বলার হিম্মত করত না। আর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ন বিষয় যেটা ছিল তা হ‌লো তখনকার আ‌লেম গন অ‌ধিকাংশই ছি‌লেন মুহা‌ক্কিক এবং গভীর জ্ঞা‌নের অ‌ধিকারী যার ফ‌লে হজরতজী ইউসুফ রহঃ এর যে কোন বয়ানাত নি‌য়ে খটকা বা অস্পষ্টতা দেখা দি‌লে তারা তা‌দের তাহকীক ও প্রজ্ঞার কার‌নে অস্পষ্টতা দুর হ‌য়ে যেত। কিন্তু মাওলানা কি আর বলব বড় আফ‌সোস আর ক‌ষ্টের কথা আজ আমা‌দের ওলামাগন মাওলানা সাদ সা‌হে‌বের ব‌্যক্তিত্ব এবং তার ইলমী প্রজ্ঞা সর্ম্পকে এ‌কেবা‌রেই না ওয়া‌কিফাল। আর দ্বিতীয় বড় ক‌ষ্টের বিষয় হ‌চ্ছে বর্তমান আ‌লেমগন এর অ‌ধিকাংশই না তাহকীক এর মেজাজ আ‌ছে আর না আ‌ছে ইলমী গভীরতা যার কার‌নে মাওলানা সাদ সা‌হেব সর্ম্পকে যে যা খুশী বল‌ছেন। ত‌বে মাওলানা আপ‌নি এ‌স্তেকামা‌তের সা‌থে কা‌জে জু‌ড়ে থা‌কেন হালত ইংশাআল্লহ ঠিক হ‌য়ে যা‌বে। ত‌বে একটা কথা আ‌লেম‌দের বিষ‌য়ে জবান সাবধান রাখ‌বেন। এখন শুধু চুপ থে‌কে কাজ ক‌র‌তে থা‌কেন। আজও হজর‌তের কথা গু‌লো ম‌নে প‌ড়ে এবং অন্ত‌রে সান্তনা যোগায় এবং চেষ্টা ক‌রি হজর‌তের নসীহত মত আমল করার জন‌্য। আল্লাহ আমা‌দের সকল‌কে দ্বীন এর প্রতি‌টি বিষয় স‌ঠিক ভা‌বে জে‌নে আমল করার তৌ‌ফিক দান করুন। আমীন
আত্মকথাঃ বান্দা রুহুল আমীন ঢাকুবী

শিক্ষিত জাহেল” মুফতি’দের হাস্যকর ফাতওয়া”বাজি!

🇧🇩 🌏 গত কিছুদিন আগে হযরতজী মাওলানা সাদ সাহেবের ব্যাপারে দেওবন্দ থেকে যে ফতোয়াটি বের হয়েছে তা’ আজ সম্পূর্ণ পড়ে শেষ করলাম।
★ অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয় হযরতজী সাহাবায়ে কেরামের দলিল দিয়ে বেতনের ব্যাপারে যে সমস্ত কথা বলেছেন সেগুলো খন্ডন করা হয়েছে আল্লামা আইনি এবং আশরাফ আলী থানভীসাব রঃ এর উদ্ধৃতি দিয়ে।
★১) হযরত আবু বকর, ওমর (রাঃ) দের ব্যাপারে যে দলিলগুলো দেওবন্দ পেশ করেছে সেগুলো ছিলো আসলে বাইতুল মালের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
★২) এবং থানভী সাব (রহঃ) যেই অভিমত গুলো দিয়েছেন সেগুলো তিনি তাদের ব্যাপারে বলেছেন যারাকিনা সম্পূর্ণ এখলাসের সাথে মুসলমানদের দ্বীনী কাজ আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন অর্থাৎ যারা তাদের জিন্দেগির পুরা সময়টা আল্লাহর রাস্তায় দিয়ে দিয়েছেন।
★৩) পৃথিবীর গ্রান্ড মুফতিদের একজন হলেন আল্লামা তাকি উসমানী সাব। তাঁর যে অভিমত, যে মাদ্রাসাগুলোতে দ্বীনিশিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষাও দেওয়া উচিৎ — এটাকেও দেওবন্দ সঠিক বলে মনে করেনা।
বর্তমান জামানার উলামায়ে কেরামের অবস্থা দেওবন্দসহ সারা বিশ্বের উলামায়ে কেরামের জানা সত্ত্বেও এ’ ধরনের এখলাসওয়ালা আলেমদের দলিলের ভুল ব্যবহার দ্বারা বর্তমানের ধর্মব্যবসায়ী ওলামায়ে কেরামের বেতন নেওয়াকে জায়েজ করাটা গোমরাহী ছাড়া আর কিছুই নয়।
🌏 ফতোয়ার মধ্যে হযরতজীর এই কথাকে কটুক্তি করা হয়েছে میں اس کام کو سیرات پر لانا چاہتے ہو আমি এই কাজটি সিরাতের উপর নিয়ে আসতে চাচ্ছি। এগুলো নাকি উম্মতকে ধোকা দেওয়ার জন্য তিনি বলে থাকেন (নাউজূবিল্লাহ)। দেওবন্দের মতো জায়গা থেকে তাঁর ব্যাপারে এ’ ধরনের কথা বলাটা কি তাহরিফ নয়? এতেকরে কি উম্মতের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি হবেনা? দেওবন্দের এই ফতোয়াটি পড়ে সাধারণ থেকে সাধারণ মানুষও বুঝতে পারবেন যে শাক দিয়ে মাছ ঢাকা হচ্ছে। অর্থাৎ হযরতজি কি বলেছেন আর কি উত্তর দিয়ে তার কথাকে খন্ডন করা হচ্ছে !!!
★ সবথেকে বড় ষড়যন্ত্র হচ্ছে কিছু মুনাফিক দেওবন্দের নাম ভাঙ্গিয়ে উম্মতের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করছে। ওই ফতোয়ার মধ্যে দেওবন্দ থেকে বলা হচ্ছে — “সম্ভবত মাওলানা সাদ সাহেব ভিন্ন পথে হাঁটছেন”। অথচ ফতোয়ার উসুল এর মধ্যে একটা মস্তবড় উসুল হচ্ছে, ধারণা করে কারো উপর কোন কথা বলা যাবে না। আফসোস, তাহলে কি ওই সমস্ত মুফতি সাহেবরা এই উসুলটি পড়েননি ? যদি বলেন “পড়েছি”, তাহলে বুঝতে হবে সব কিছু জানা সত্ত্বেও বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে একশ্রেণীর মুনাফিক উলামায়ে কেরাম কাজ করে যাচ্ছেন। সেটা দেওবন্দের মধ্যেও থাকতে পারে এটা আশ্চর্যের কিছুই নয়।
আল্লাহ সুঃ আমাদেরকে আকল দিয়েছেন সঠিকটাকে উপলব্ধি করার জন্য। তাই আমাদের সকলেরই সঠিকটাকে জানার জন্য চেষ্টা করা দরকার। প্রয়োজনে তাহকিকের জন্য ইন্ডিয়া সফর করবো। কিন্তু আন্দাজে শোনা কথার উপরে ঘোড়া দাবড়ানো যাবেনা। যেমনটি আল্লাহতালা কুরআনে বলেছেন وان تطيع اكثر من في الارض يضلوك عن سبيل الله এই আয়াতের মধ্যে যে,
— (হে নবী) “আপনি যদি জমিনের অধিকাংশ লোকের অনুসরণ করতে থাকেন, তাহলে তারা আপনাকে আল্লাহর রাস্তা থেকে বিচ্যুত করে ফেলবে। তারা কল্পনার অনুসরণ করে আর শুধু অনুমানভিত্তিক কথা বলে।” অর্থাৎ না জেনে তাহকীক ছাড়া কথা বলে ।
★ আল্লাহ সুঃ আমাদেরকে বুঝার তৌফিক দান করুন।
যদি কারো কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে মেহেরবানী করে সরাসরি নীচের নাম্বারে যোগাযোগ করবেন।
★★আব্দুর রহমান
01985232749

কখন চেয়ারে বসে নামাজ পড়া যাবে?

চেয়ারে বসে কখন নামায পড়তে পারবে……?

আজকাল আমাদের দেশে চেয়ারে বসে নামায পড়া ফ্যাশন হয়ে গেছে। যা কিছুতেই কাম্য নয়। এখানে কয়েকটি বিষয় ভাল করে লক্ষ্য রাখতে হবে।

🔳১ নং মাসআলা

যে ব্যক্তি রুকু সেজদা করতে সক্ষম উক্ত ব্যক্তি যদি চেয়ারে বসে নামায পড়ে তাহলে উক্ত ব্যক্তির নামায হবে না। কারণ রুকু সেজদা নামাযের রুকন। তা কারণ ছাড়া ছেড়ে দিলে নামায হবে না।

ﻣﻦ ﻓﺮﺍﺋﻀﻬﺎ ﺍﻟﻘﻴﺎﻡ ﻓﻰ ﻓﺮﺽ ﻟﻘﺎﺩﺭ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﻋﻠﻰ ﺍﻟﺴﺠﻮﺩ، ﺍﻟﺪﺭ ﺍﻟﻤﺨﺘﺎﺭ ﻣﻊ ﺭﺩ ﺍﻟﻤﺤﺘﺎﺭ – 2/132 )

এমনকি যদি কিছু সময় দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়াতে পারে না। উক্ত ব্যক্তি যদি যতটুকু সময় দাঁড়াতে পারে ততটুকু সময় দাঁড়ানোর চেষ্টা না করেই বসে নামায পড়ে, তাহলেও উক্ত ব্যক্তির নামায হবে না।

যতক্ষণ সময় দাঁড়াতে পারে ততক্ষণ দাঁড়াবে। তারপর যখন দাঁড়াতে অক্ষম হয়ে যাবে, তখন বসে যাবে। এমনকি যদি লাঠিতে ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারে বা হেলান দিয়ে দাঁড়াতে পারে, তাহলে যদি নিকটে লাঠি থাকে বা হেলান দেবার সুযোগ থাকে, তাহলে লাঠিতে ভর দিয়ে বা হেলান দিয়ে হলেও দাঁড়িয়ে নামায আদায় করবে। বসবে না। যদি লাঠি বা হেলান দেয়ার সুযোগ থাকা সত্বেও অযথাই বসে নামায পড়ে তাহলেও উক্ত ব্যক্তির নামায হবে না।

তবে যদি একদম দাঁড়াতেই না পারে, বা দাঁড়ালে মাথা ঘুরে পড়ে যায়, তাহলে বসে নামায পড়ার সুযোগ রয়েছে।

ﻭﺍﻥ ﻗﺪﺭ ﻋﻠﻰ ﺑﻌﺾ ﺍﻟﻘﻴﺎﻡ ﻭﻟﻮ ﻣﺘﻜﺌﺎ ﻋﻠﻰ ﻋﺼﺎ ﺃﻭ ﺣﺎﺋﻂ ﻗﺎﻡ ﻟﺰﻭﻣﺎ ﻭﻣﺎ ﻗﺪﺭ ﻣﺎ ﻳﻘﺪﺭ ﻭﻟﻮ ﻗﺪﺭ ﺁﻳﺔ ﺃﻭ ﺗﻜﺒﻴﺮﺓ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﺬﻫﺐ ﻷﻥ ﺍﻟﺒﻌﺾ ﻣﻌﺘﺒﺮ ﺑﺎﻟﻜﻞ، ‏( ﺍﻟﺪﺭ ﺍﻟﻤﺨﺘﺎﺭ ﻣﻊ ﺭﺩ ﺍﻟﻤﺤﺘﺎﺭ – 2/267 )

🔳২নং মাসআলা

যে ব্যক্তি বসে রুকু ও সেজদা করতে সক্ষম উক্ত ব্যক্তির জন্য চেয়ারে বসে নামায জায়েজ নয়। সেজদা করতে সক্ষম হওয়া সত্বেও চেয়ারে বসে নামায পড়লে নামায হবে না। কারণ সেজদা নামাযের একটি স্বতন্ত্র রুকন। যা কোন কারণ ছাড়াই ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। আর নামাযের কোন রুকন কারণ ছাড়া ছেড়ে দিলে নামায হয় না।

ﻭﺇﻥ ﻋﺠﺰ ﻋﻦ ﺍﻟﻘﻴﺎﻡ ﻭﻗﺪﺭ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻘﻌﻮﺩ، ﻓﺈﻧﻪ ﻳﺼﻠﻰ ﺍﻟﻤﻜﺘﻮﺑﺔ ﻗﺎﻋﺪﺍ ﺑﺮﻛﻮﻉ ﻭﺳﺠﻮﺩ ﻭﻻ ﻳﺠﺰﻳﻪ ﻏﻴﺮ ﺫﻟﻚ، ‏( ﺗﺎﺗﺎﺭﺧﺎﻧﻴﺔ /2-667)

🔳৩ নং মাসআলা

যে ব্যক্তি জমিনের উপর সিজদা করতে অক্ষম) যদি দাঁড়িয়ে নামায আদায় করতে সক্ষম হয় তাহলে তাকে দাঁড়িয়েই নামায আদায় করতে হবে। আর যেহেতু সে সিজদা করতে অক্ষম তাই সে ইশারায় সিজদা করবে (যদি রুকু করতেও অক্ষম হয় তাহলে রুকুও ইশারায় আদায় করবে)। জমিনে সিজদা করতে অক্ষম হওয়ার কারণে দাঁড়ানোর ফরয ছাড়া যাবে না। {‘ফাতহুল কাদীর’ খ. ১ পৃ. ৪৬০,‘আননাহরুলফায়েক খ. ১ পৃ. ৩৩৭ এবং ‘ইলাউস সুনান খ. ৭ পৃ. ২০৩}

কিয়ামের ফরয আদায় থেকে শুধু ঐ ব্যক্তি ছাড় পাবে যে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করতে অক্ষম। সিজদা করতে অক্ষম হওয়ার কারণে কিয়াম-এর ছাড় পাবে না। কিয়াম নামাযের একটি স্বতন্ত্র ফরয তা শুধু সিজদার জন্য নয়।

যে ব্যক্তি দাড়িয়ে নামায শুরু করতে পারে কিন্তু সিজদার জন্য জমিনে বসার পর আবার দাঁড়াতে তার অনেক কষ্ট হয়, এমন ব্যক্তিও কিয়াম (দাঁড়িয়ে নামায পড়া) একেবারে ছাড়বে না। বরং প্রথম রাকাত দাড়িয়ে আদায় করবে। এরপর দাঁড়াতে কষ্ট হওয়ার কারণে বাকী নামায বসে আদায় করবে।

যে ব্যক্তি শুধু আরামের জন্য অথবা মামুলি কষ্টের বাহানায় চেয়ারে নামায আদায় করছেন তিনি মস্ত বড় ভুলকাজ করছেন। এভাবে নামায আদায় করার দ্বারা তার নামাযই হবে না। তার উপর ফরয, দাড়িয়ে নামায আদায় করা এবং যথা নিয়মে রুকু সিজদা আদায় করা।

আর যে ব্যক্তি জমিনের উপর বসে নামায আদায় করতে সক্ষম তার জন্য শুধু এই বাহানায় চেয়ারে বসে নামায আদায় করা ঠিক নয় যে, সে দাড়িয়ে নামায আদায় করতে বা রুকু সিজদা করতে অক্ষম। বরং এ ধরণের লোকেরা জমিনে বসে নামায আদায় করবে।

চেয়ারেবসেনামাযআদায়করবেনশুধুঐ_সমস্ত

লোকেরা যারা জমিনে বসে নামায আদায় করতে অক্ষম।

হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাত বারকাতুহুম তার সদ্য লেখা এ ফতওয়ায় চেয়ারে বসে নামায আদায় করার ক্ষতির দিকগুলো আলোচনা করতে গিয়ে বলেন,‘জমিনে বসে নামায আদায় করার শক্তি থাকাসত্ত্বেও চেয়ারে বসার যে প্রচলন দেখা যায় তাতে বিভিন্ন দিক থেকে আপত্তি রয়েছে।

১.

মাযুর ব্যক্তিদের জন্য জমিনে বসে নামায আদায় করাই উত্তম ও মাসনূন তরীকা। এর উপরই সাহাবায়েকেরাম রাযিয়াল্লাহু আনহুম এবং পরবর্তীদের আমল চলে আসছে। চেয়ারে বসে নামায আদায় করার রেওয়াজ কেবল শুরু হয়েছে। খায়রুল কুরূনে এর নযীর নেই। অথচ সে যুগে মাযুরও ছিল চেয়ারও ছিল।

২.

যে ব্যক্তি শরীয়তের দৃষ্টিতে মাযুর নয়, অর্থাৎ কিয়াম, রুকু সিজদা করতে সক্ষম, তার জন্য জমিনে বাচেয়ারে বসে ফরয এবং ওয়াজিব নামায আদায় করাই জায়েয নেই। অথচ কখনো কখনো দেখা যায় এধরণের সুস্থ ব্যক্তিও সামনে চেয়ার পেয়ে চেয়ারে বসে নামায আদায় করে নেয়। ফলে তার নামাযই হয় না।

৩.

চেয়ারের ব্যবহারের কারণে কাতার সোজা করা ও সোজা রাখার ক্ষেত্রে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়। অথচ মিলে মিলে দাড়ানো ও কাতার সোজা করার বিষয়ে হাদীস শরীফে জোর তাকীদ এসেছে।

৪.

বিনা প্রয়োজনে মসজিদে চেয়ারের অধিক্যের কারণে তা নাসারাদের গির্জা ও ইহুদীদের উপাসনালয়ের সাদৃশ দেখা যায়। তারা গির্জায় চেয়ার ও বেঞ্চে বসে উপাসনা করে। আর দ্বীনী বিষয়ে ইহুদী নাসারা ও অন্যান্য জাতির সাদৃশ্য থেকেহ নিষেধ করা হয়েছে।

৫.

নামায তো এমন ইবাদত যা আদায় করতে হয় বিনয়াবনত হয়ে বিগলিত চিত্তে। আর চেয়ারে বসে নামাযআদায় করার চেয়ে জমিনে বসে নামায আদায়ের মাঝে তা পূর্ণমাত্রায় পাওয়া যায়।

৬.

কোন কোন যুবক ও সুস্থ ব্যক্তি নামাযের পর মসজিদে রাখা চেয়ারে বসে আরাম করে। কখন
কখনো চেয়ার নিয়ে গোল হয়ে বসে আলাপচারিতায় লিপ্ত হয়। এটা মসজিদের পবিত্রতা, মার্যাদা ও আদবের খেলাফ।

৭.

মসজিদে চেয়ারের ব্যবহারের কারণে কোন কোন ছুরতে কুরআনে কারীম এবং মুরববী নামাযীদের আদবও এহতেরামের ব্যত্যয় ঘটে।’’

(নমুনা স্বরূপ আপত্তির এ সাতটি দিক উল্লেখ করার পর হযরত লেখেন :

ﺍﺱ ﻟﺌﮯ ﺍﺷﺎﺭﮦ ﺳﮯ ﻧﻤﺎﺯ ﭘﺮﻫﻨﮯ ﻛﮯ ﻟﺌﮯ ﺑﻬﻰ ﺣﺘﻰ ﺍﻻﻣﻜﺎﻥ ﻛﺮﺳﻴﻮﮞ ﻛﮯ ﺍﺳﺘﻌﻤﺎﻝ ﺳﮯ ﺑﭽﻨﺎ ﭼﺎﮨﺌﮯ ﺍﻭﺭ ﺍﻥ ﻛﮯ ﺍﺳﺘﻌﻤﺎﻝ ﻛﻰ ﺣﻮﺻﻠﮧ ﺷﻜﻨﻰ ﻛﺮﻧﻰ ﭼﺎﮨﺌﮯ، ﺍﻭﺭ ﺍﻥ ﻛﺎ ﺍﺳﺘﻌﻤﺎﻝ ﺻﺮﻑ ﺍﻥ ﺣﻀﺮﺍﺕ ﻛﻰ ﺣﺪ ﺗﻚ ﻣﺤﺪﻭﺩ ﻛﺮﻧﺎ ﭼﺎﮨﺌﮯ ﺟﻮ ﺯﻣﻴﻦ ﭘﺮ ﺑﻴﭩﻬﻜﺮ ﻧﻤﺎﺯ ﺍﺩﺍ ﻛﺮﻧﮯ ﭘﺮ ﻗﺎﺩﺭ ﻧﮧ ﮨﻮﮞ .

‘‘…এ জন্যই ইশারায় নামায আদায় করার জন্যও যথাসম্ভব চেয়ারের ব্যবহার না করা চাই। চেয়ারব্যবহারের প্রতি নিরুৎসাহিত করা চায় এবং এর ব্যবহার কেবলমাত্র ঐ সকল ব্যক্তির মাঝে সিমাবদ্ধ করা উচিত, যারা জমিনে বসে নামায আদায় করতে সক্ষম নয়।’’

এই স্পষ্ট বক্তব্য সত্ত্বেও হযরত আবার এটাও লিখেছেন যে, রুকু সিজদা করতে অক্ষম ব্যক্তিগণ জমিনেরউপর বসে ইশারায় নামায আদায় করতে সক্ষম হওয়ার পরও যদি চেয়ারে বসে নামায আদায় করে থাকেন,তাহলে সেটাও জায়েয, কিন্তু অনুত্তম কাজ। আর দারুল উলূম দেওবন্দের ফতওয়ায় এটাকে শুধু অনুত্তমই বলা হয়নি বরং বলা হয়েছে, তা বিভিন্ন কারণে ‘কারাহাত’ মুক্ত নয়। {ফাতাওয়া দারুল উলুম করাচি, ফাতাওয়া নং- ৪১/১৫০৮,২ রবিউস সানী ১৪৩৪হিজরী}

তাই রুকু সেজদা করতে সক্ষম না হলেও চেয়ারে না বসে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করবে। বাকি এমতাবস্থায় রুকু সেজদা চেয়ারে বসে দেয়া জায়েজ আছে। তবে অনুত্তম। কিন্তু কিয়াম বাদ দিবে না যদি দাঁড়াতে সক্ষম হয়।

আর যদি দাঁড়াতেও সক্ষম না হয়, তাহলে বসে ইশারায় নামায পড়বে। এ অবস্থায়ও চেয়ার ব্যাবহার অনুচিত। হ্যাঁ, যদি চেয়ার ছাড়া নিচে বসতেই পারে না। তাহলে দুই পা ছড়িয়ে বসে নামায পড়বে। যদি এতেও সক্ষম না হন, তাহলে চেয়ারে বসে নামায আদায় করবেন।

ﻋﻦ ﻋﻤﺮﺍﻥ ﺑﻦ ﺣﺼﯿﻦ – ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ – ﻗﺎﻝ : ﮐﺎﻧﺖ ﺑﻲ ﺑﻮﺍﺳﯿﺮُ، ﻓﺴﺄﻟﺖُ ﺍﻟﻨﺒﻲ – ﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﯿﻪ ﻭﺳﻠﻢ – ﻋﻦ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﻓﻘﺎﻝ : ” ﺻﻞّ ﻗﺎﺋﻤًﺎ ، ﻓﺈﻥ ﻟﻢ ﺗﺴﺘﻄﻊ ﻓﻘﺎﻋﺪًﺍ ، ﻓﺈﻥ ﻟﻢ ﺗﺴﺘﻄﻊ ﻓﻌﻠﯽ ﺟﻨﺐٍ “ ۔

হযরত ইমরান বিন হুসাইন রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, তোমরা দাড়িয়েঁ নামায পড়। যদি তোমরা দাঁড়াতে সক্ষম না হও, তাহলে বসে নামায পড়। আর যদি বসতেও সক্ষম না হও তাহলে কাত হয়ে নামায পড়। {বুখারী, হাদীস নং-১১১৭,১০৬৬}

🔳৪ নং মাসআলা

ইশারায় নামায পড়ার সময় বা চেয়ারে বসে নামায পড়ার সময় সামনে টেবিল রেখে তাতে সেজদা দেবার কোন প্রয়োজন নেই। টেবিলে সেজদা দেয়া আর শুধু ইশারা করার মাঝে কোন পার্থক্য নেই।

কারণ এর দ্বারা মূল সেজদা আদায় হয় না। কারণ-

১. সিজদার জন্য শর্ত হল, উভয় হাঁটু জমিনের উপর রাখা।

২. সিজদার সময় কপালের অংশ কোমরের অংশথেকে নীচু থাকা দরকার।

চেয়ারে বসে সামনের কোন কিছুর উপর কপাল রাখলে উল্লিখিত উভয় শর্ত পাওয়াযায় না। সুতরাং সেটাকে হাকীকী সিজদা (নিয়মতান্ত্রিক সিজদা) বলা ঠিক নয়।

ﺇﻥ ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻤﻮﺿﻮﻉ ﻣﻤﺎ ﻳﺼﺢ ﺍﻟﺴﺠﻮﺩ ﻋﻠﻴﻪ ﻛﺤﺠﺮ ﻣﺜﻼ ﻭﻟﻢ ﻳﺰﺩ ﺍﺭﺗﻔﺎﻋﻪ ﻋﻠﻰ ﻗﺪﺭ ﻟﺒﻨﺔ ﺃﻭ ﻟﺒﻨﺘﻴﻦ ﻓﻬﻮ ﺳﺠﻮﺩ ﺣﻘﻴﻘﻰ، ﻓﻴﻜﻮﻥ ﺭﺍﻛﻌﺎ ﺳﺎﺟﺪﺍ، ﻭﺇﻥ ﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﺍﻟﻤﻮﺿﻮﻉ ﻛﺬﺍﻟﻚ ﻳﻜﻮﻥ ﻣﻮﻣﺌﺎ، ﻓﻼ ﻳﺼﺢ ﺍﻗﺘﺪﺍﺀ ﺍﻟﻘﺎﺋﻢ ﺑﻪ، ‏( ﺭﺩ ﺍﻟﻤﺤﺘﺎﺭ – 2/569 )

চেয়ারে বসে নামাজ পড়ার শরয়ী হুকুম।

মুফতী আব্দুল মালেক হাফিজাহুল্লাহ
بسم الله الرحمن الرحيم

الحمد لله، وسلام على عباده الذين اصطفى، وأشهد أن لا إله إلا الله وحده لاشريك له، وأشهد أن محمدا عبده ورسوله، أما بعد:

ইসলামে সবচে বড় ইবাদত এবং ঈমানের পর সবচে বড় ফরয হচ্ছে নামায। কুরআন-সুন্নাহ্য় নামায আদায়ের নির্দেশ বারবার أَقِيمُوا الصّلَاةَ ও يُقِيمُونَ الصّلَاةَ এসব বাণীর মাধ্যমে এসেছে। আর সালাত কায়েম করার অর্থ হল নামাযের ফারায়েয ও আরকান, ওয়াজিবাত ও সুনান, আদাব ও মুস্তাহাব্বাত ইত্যাদি বিষয়গুলোর প্রতি যত্নবান হয়ে নামায আদায় করা।

নামাযের মূল ভিত্তি হল, তার আরকান ও ওয়াজিবগুলো। এর মাঝে সবচে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কিয়াম, কিরাত, রুকু, সিজদা এবং কা‘দা তথা বৈঠক। আর নামাযের রূহ হচ্ছে, আদব ও তাওয়াজু এবং নম্রতা ও বিনয়ের সাথে খুশু-খুযু অবস্থায় আল্লাহ তাআলার সামনে ছোট হয়ে হাজির হওয়া। এই হাকীকত ও রূহানিয়তের প্রতি খেয়াল করলে চেয়ারে বসে নামায আদায় করার কথা কল্পনাও করা যায় না। কেননা এতে না কিয়ামের ফরয আদায় হয়, না রুকু-সিজদার ফরয; আর না এর মাধ্যমে তাশাহহুদের জন্য যমিনে বসার হুকুম আদায় হয়। আর নামাযের যে রূহ অর্থাৎ সবিনয়ে আল্লাহ তাআলার সামনে হাজির হওয়া তাও এখানে অনুপস্থিত। কারণ চেয়ার সাধারণত আরাম ও মর্যাদার আলামত; তাওয়াজু ও বিনয়ের আলামত নয়।

এজন্য নামায আদায়ের পদ্ধতি হল, নামাযের সকল আরকান, ওয়াজিবাত, সুনান এবং আদাব ও মুস্তাহাব্বাতের প্রতি যথাযথ খেয়াল রেখে নামায আদায় করা। দাঁড়িয়ে নামায আদায় করা এবং রুকু-সিজদা যথা নিয়মে আদায় করা।

নামাযে বৈঠকের যে বিধান রয়েছে তার অর্থই হল, যমিন বা সমতলে বসা। আর সিজদা, যা মূলত নামাযের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ রুকন। এর হাকীকতই হচ্ছে, শরীরের উপরের অংশ নিচু হওয়া আর পেছনের অংশ উঁচু হওয়া। সিজদার পদ্ধতি সম্পর্কে হাদীস শরীফে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন

أُمِرْتُ أَنْ أَسْجُدَ عَلَى سَبْعَةِ أَعْظُمٍ، عَلَى الجَبْهَةِ وَأَشَارَ بِيَدِهِ عَلَى أَنْفِهِ وَاليَدَيْنِ وَالرّكْبَتَيْنِ، وَأَطْرَافِ القَدَمَيْنِ.

আমাকে সাতটি অঙ্গ দ্বারা সিজদা করতে (আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে) আদেশ করা হয়েছে : (১) কপাল ও নাক। (২, ৩) দুই হাত। (৪, ৫) দুই হাঁটু। (৬, ৭) দুই পায়ের আঙ্গুলসমূহ। সহীহ বুখারী, হাদীস ৮১২

এ হাদীস থেকে এটি স্পষ্ট যে, এই সাত অঙ্গ ব্যবহার করে সিজদা করলেই তা পরিপূর্ণ সিজদা হবে এবং আল্লাহ তাআলা এভাবে সিজদা করারই হুকুম প্রদান করেছেন। আর নিচে বসে সমতলে সিজদা করার দ্বারাই এ হুকুম আদায় হয়। চেয়ারে বসে এভাবে সিজদা আদায় করা সম্ভবই নয়।

মোটকথা, কুরআন-সুন্নাহ্য় নামাযের যে পদ্ধতি ফরয করা হয়েছে চেয়ারে বসে নামায আদায় করার ক্ষেত্রে সেই ফরয আদায় করা সম্ভবই নয়।

এখন প্রশ্ন হল, মাযূর ও অসুস্থ ব্যক্তি কী করবে? এর উত্তর হল মাযূর মুসল্লী তো আজকে প্রথম নয়। আগেও তো মাযূর ও অসুস্থ মানুষ ছিল। ওযর ও অসুস্থ অবস্থায় কীভাবে নামায আদায় করতে হবে এর তালীমও কুরআন-সুন্নাহ এবং ইসলামী শরীয়তে রয়েছে। প্রয়োজন হল, ওজরের সময় নামায আদায় করার পদ্ধতি-সংশ্লিষ্ট শরয়ী বিধি-বিধানের ইলম যথাযথ হাছিল করা এবং সে অনুযায়ী আমল করা। সহজতা, আরামপ্রিয়তা এবং নিছক আন্দাজ ও ধারণার ভিত্তিতে এমনি এমনি সিদ্ধান্ত নিয়ে নেওয়া যে, আমার জন্য চেয়ারে বসে নামায পড়া জায়েয আছে এমনটি করা কখনই ঠিক নয়। এতে যেভাবে শরীয়তের ব্যাপারে একধরনের বেপরোয়া ভাব প্রকাশ পায় তেমনি নামাযের মত আযীমুশ শান ইবাদতের ক্ষেত্রে চরম পর্যায়ের উদাসীনতাও সাব্যস্ত হয়। ওযরের ক্ষেত্রে শরীয়তের উসূল ও মূলনীতি হল, যে কোনো ওযরের কারণেই কেউ মাযূর সাব্যস্ত হয় না। তাই মামুলী ওযরের কারণে নিজেকে মাযূর মনে করা বৈধ নয়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উসূল হল, যতটুকু ওজর ততটুকু রুখসত বা ছাড়। এমন নয় যে, এক ওজরের কারণে সকল ফরয থেকে ছুট্টি। যেমন, নামাযে দাঁড়ানোর সক্ষমতা নেই বলে এখন রুকু-সিজদাও মাফ। রুকু-সিজদা করতে পারে না বিধায় এখন কা‘দা (তাশাহহুদের জন্য যমিনে বসা)-ও মাফ বিষয়টি এমন নয়।

হাদীস শরীফে এসেছে, ইমরান ইবনে হুসাইন রা. বলেনÑ

كَانَتْ بِي بَوَاسِيرُ، فَسَأَلْتُ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ عَنِ الصّلاَةِ، فَقَالَ: صَلِّ قَائِمًا، فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَقَاعِدًا، فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَعَلَى جَنْبٍ.

আমার অর্শরোগ ছিল। তাই আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি কীভাবে নামায পড়ব সে ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তুমি দাঁড়িয়ে নামায আদায় করবে। দাঁড়িয়ে পড়তে সক্ষম না হলে বসে বসে পড়বে। বসেও সক্ষম না হলে কাত হয়ে শুয়ে আদায় করবে। (সহীহ বুখারী, হাদীস ১১১৭)

দাঁড়িয়ে স্বাভাবিক নিয়মে রুকু-সিজদা করে নামায পড়তে পারেন না এমন ব্যক্তির নামাযের পদ্ধতির ব্যাপারে এ হাদীসে মৌলিক নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এ হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে আবদুল বার রাহ. বলেনÑ

هَذَا يُبَيِّنُ لَكَ أَنّ الْقِيَامَ لَا يَسْقُطُ فَرْضُهُ إِلّا بِعَدَمِ الِاسْتِطَاعَةِ ثُمّ كَذَلِكَ الْقُعُودُ إِذَا لَمْ يَسْتَطِعْ ثُمّ كَذَلِكَ شَيْءٌ شَيْءٌ يَسْقُطُ عِنْدَ عَدَمِ الْقُدْرَةِ عَلَيْهِ.

এ হাদীস স্পষ্টভাবে বলে দিচ্ছে যে, কিয়াম করতে অক্ষম হওয়ার আগ পর্যন্ত নামাযে কিয়াম করা ফরয; তা বাদ দেওয়া যাবে না। তেমনি কা‘দা (বৈঠক)। তা আদায়ে অক্ষম হওয়ার আগ পর্যন্ত তা আদায় করার ফরয বিধান বহাল থাকবে। নামাযের অন্যান্য ফরয-ওয়াজিব আমলগুলোও এমনি। যখন যেটি আদায়ে অক্ষম হবে কেবল সেটিই তখন ছাড়া যাবে। (আততামহীদ ১/১৩৫)

উপরোক্ত হাদীস ও শরীয়তের অন্যান্য দলীলের ভিত্তিতে মুজতাহিদ ইমামগণ মাযূর ও অসুস্থ ব্যক্তির নামাযের যেসব বিধি-বিধান উল্লেখ করেছেন তার আলোকে চেয়ারে বসে নামাযের হুকুম সামনে তুলে ধরা হল।

অসুস্থ হলেই চেয়ারে নামায জায়েয হয়ে যায় না

এখানে বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, বর্তমানে সামান্য অসুস্থতা, সামান্য দুর্বলতা, হালকা ব্যথা-বেদনার অজুহাতে চেয়ারে বসে নামায আদায়ের প্রবণতা অনেকের মধ্যে লক্ষ করা যাচ্ছে। দিন দিন এ প্রবণতা বেড়েই চলেছে। ফলে মসজিদে মসজিদে চেয়ারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ চেয়ারে বসে নামায আদায়কারীদের মধ্যে এমন লোকও থাকেন, যারা হাঁটা-চলা, উঠা-বসা থেকে শুরু করে দৈনন্দিন কাজকর্ম স্বাভাবিকভাবেই করে যাচ্ছেন। কিন্তু নামাযের সময় তারা মাযূর হয়ে চেয়ার নিয়ে বসে পড়েন।

ভালোভাবে মনে রাখা দরকার, যে কোনো অসুস্থতার কারণেই চেয়ারে বসে নামায জায়েয হয়ে যায় না। বরং ইমরান ইবনে হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত পূর্বোক্ত হাদীসটিতে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে

فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَقَاعِدًا، فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَعَلَى جَنْبٍ.

‘দাঁড়িয়ে পড়তে সক্ষম না হলে বসে বসে পড়বে। বসে সক্ষম না হলে কাত হয়ে শুয়ে আদায় করবে।’

এর থেকে স্পষ্ট যে, বসে নামায পড়ার জন্য শর্ত হল দাঁড়ানোর সক্ষমতা না থাকা। তেমনি যমিনে/সমতলে না বসে পড়ার জন্যও শর্ত, যমিনে/সমতলে বসার সক্ষমতা না থাকা।

আর কোন্ প্রকারের অসুস্থতা অক্ষমতা গণ্য হবে কোনটি গণ্য হবে না এবং এর মানদন্ড কী ফকীহগণ তা নির্ণয় করে দিয়ে গেছেন।

মুসান্নাফে আবদুর রায্যাকে বর্ণিত হয়েছে, আমর ইবনে মায়মূন রাহ. বলেন, তার পিতা মায়মূন ইবনে মেহরান রাহ.-কে প্রশ্ন করা হল

مَا عَلَامَةُ مَا يُصَلِّي الْمَرِيضُ قَاعِدًا؟

অসুস্থ ব্যক্তি কখন বসে নামায পড়তে পারবেÑ এর মানদন্ড কী?

উত্তরে তিনি বলেন

إِذَا كَانَ لَا يَسْتَطِيعُ أَنْ يَقُومَ لِدُنْيَاهُ فَلْيُصَلِّ قَاعِدًا.

যখন সে তার দুনিয়াবী কাজের জন্য দাঁড়াতে পারে না এ অবস্থায় পৌঁছলে সে বসে নামায পড়তে পারবে। (মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক, বর্ণনা ৪১২৬)

হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ কিতাব আলমুহীতুল বুরহানীতে আছে

وقال عليه السلام لعمران بن حصين رضي الله عنه حين عاده وهو مريض: صل قائماً فإن لم تستطع فقاعداً، فإن لم تستطع فعلى الجنب تومىء إيماءً والمعنى في ذلك أن الطاعة بحسب الطاقة. وقوله: فإن عجز عن القيام وقدر على القعود يصلي المكتوبة قاعداً، لم يرد بهذا العجز العجز أصلاً لا محالة بحيث لا يمكنه القيام بأن يصير مقعداً، بل إذا عجز عنه أصلاً، أو قدر عليه إلا أنه يضعفه ذلك ضعفاً شديداً حتى تزيد علته لذلك، أو يجد وجعاً بذلك، أو يخاف إبطاء البرء، فهذا وما لو عجز عنه أصلاً سواء.

(আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২৬)

অর্থাৎ অক্ষমতার প্রথম অর্থ হল, কাজটির সামর্থ্যই না থাকা। আর যদি সামর্থ্য থাকে, কিন্তু এটি করলে সে বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে বা এর কারণে তার রোগ বেড়ে যায় কিংবা এর কারণে তীব্র ব্যথা অনুভব করে অথবা এমনটি করলে তার রোগ নিরাময় হতে বিলম্ব হবে এ অবস্থাগুলোই কেবল অক্ষমতার অন্তর্ভুক্ত।

ইমাম ইবনুল হুমাম রাহ. বলেনÑ

(قوله إذا عجز المريض) المراد أعم من العجز الحقيقي حتى لو قدر على القيام، لكن يخاف بسببه إبطاء برء أو كان يجد ألما شديدا إذا قام جاز له تركه، فإن لحقه نوع مشقة لم يجز ترك القيام بسببها.

(ফাতহুল কাদীর ২/৩)

এখানে তিনি আরো স্পষ্টভাবে বলেছেন, দাঁড়ালে অনেক বেশি ব্যথা হলেই কেবল না দাঁড়িয়ে নামায পড়ার সুযোগ আছে। শুধু কিছু ব্যথা বা কষ্ট লাগার কারণেই কিয়ামের ফরয ছেড়ে দেওয়া জায়েয হবে না।

আর রোগ বেড়ে যাওয়া এবং রোগ নিরাময় হতে বিলম্ব হওয়ার বিষয়টি কীভাবে ফয়সালা করা হবে এর মূলনীতিও ফকীহগণ নির্ধারণ করে দিয়ে গেছেন। ইমাম ইবনুল হুমাম রাহ. বলেন

وتحقق الحرج منوط بزيادة المرض أو إبطاء البرء أو فساد عضو، ثم معرفة ذلك باجتهاد المريض، والاجتهاد غير مجرد الوهم، بل هو غلبة الظن عن أمارة أو تجربة أو بإخبار طبيب مسلم غير ظاهر الفسق.

(ফাতহুল কাদীর ২/৩৫১)

অর্থাৎ রোগ বেড়ে যাওয়া এবং রোগ নিরাময় হতে বিলম্ব হওয়ার ফয়সালা শুধু ধারণা বা অনুমানের উপর নির্ভর করে করা যাবে না। বরং স্পষ্ট কোনো আলামত বা রোগীর পূর্ব অভিজ্ঞতা কিংবা মুসলিম অভিজ্ঞ ভালো কোনো ডাক্তারের বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে তা নির্ণয় করতে হবে।

আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রাহ.-ও একই কথা বলেছেন। তিনি বলেন

(قوله خاف) أي غلب على ظنه بتجربة سابقة أو إخبار طبيب مسلم حاذق.

(রদ্দুল মুহতার ২/৯৬)

এখানে লক্ষণীয় যে, এক্ষেত্রে ডাক্তার মুসলিম হওয়ার শর্ত এজন্য করা হয়েছে যে, ডাক্তার যদি অমুসলিম হয় তাহলে একে তো তার কাছে নামাযের গুরুত্ব থাকবে না। দ্বিতীয়ত নামাযের পদ্ধতি সম্পর্কেও তার কোনো ধারণা থাকার কথা নয়। সেজন্য নামাযের আরকান যথাযথ আদায় করলে রোগীর শারীরিক ক্ষতি হবে কি না এ সম্পর্কেও তার বাস্তব ধারণা থকবে না। সবচেয়ে বড় কথা হল, দ্বীনী বিষয়ে কোনো অমুসলিমের উপর আস্থা রাখা যায় না। এজন্যই মুসলিম ডাক্তার শর্ত করা হয়েছে। তবে কখনো কখনো মুসলিম ডাক্তারের মাঝেও দ্বীনী বিষয়ে উদাসীনতা লক্ষ্য করা যায়। তাই চেয়ারে বসে নামায শুরু করার পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শের পাশাপাশি নিজের অবস্থার পুরোপুরি বিবরণ দিয়ে কোনো মুফতী বা ফতোয়া বিভাগ থেকে মাসআলা জেনে নিতে হবে। নতুবা ক্ষেত্রবিশেষে নামায সহীহ নাও হতে পারে।

মোটকথা, অসুস্থ হলেই চেয়ারে বসে নামায জায়েয হয়ে যায় না। বরং অসুস্থতার ধরন হিসেবে এর হুকুমও ভিন্ন হয়ে থাকে। ১. এমন অসুস্থতা, যা সত্তে¡ও চেয়ারে বসে পড়লে নামায শুদ্ধই হবে না। ২. এমন অসুস্থতা, যার কারণে নামাযের আংশিক চেয়ারে বসে আদায় করলে নামায ফাসেদ হবে না। ৩. এমন অসুস্থতা, যার কারণে পুরো নামায চেয়ারে বসে পড়া জায়েয।

যাদের জন্য চেয়ারে বসে নামায পড়া নাজায়েয

১. যে ব্যক্তি শরীয়তের দৃষ্টিতে মাযূর নয়, অর্থাৎ কিয়াম, রুকু-সিজদা করতে সক্ষম, তার জন্য যমিনে বা চেয়ারে বসে নামায আদায় করাই জায়েয নয়। অথচ কখনো কখনো দেখা যায়, এ ধরনের সুস্থ ব্যক্তিও সামনে চেয়ার পেয়ে চেয়ারে বসে নামায আদায় করে নেয়। ফলে তার নামাযই হয় না।

২. শুধু আরামের জন্য অথবা মামুলি কষ্টের বাহানায় চেয়ারে বসে নামায পড়লে নামায আদায় হবে না। এমনকি যমিনে বসে পড়লেও আদায় হবে না।

৩. যার পায়ে বা কোমরে ব্যথা। দাঁড়িয়ে স্বাভাবিক নিয়মে রুকু-সিজদা করে নামায পড়লে শরীরে ব্যথা লাগে। কিন্তু তার ব্যথা এ পরিমাণের নয় যে, তা অনেক বেশি। যা সহ্যের বাইরে; বরং এ ব্যথা নিয়ে সে কিয়াম ও রুকু-সিজদা করে নামায পড়তে পারে তবে তার জন্যও যমিনে বা চেয়ারে বসে নামায পড়ার কোনো সুযোগ নেই। এমন করলে নামায আদায় হবে না।

৪. যে কিছুটা অসুস্থ। কিন্তু তার অসুস্থতা এ পর্যায়ের নয় যে, সে কিয়াম ও রুকু-সিজদা করে নামায পড়তে সক্ষমই নয়, বা এভাবে নামায পড়লে তার রোগ বেড়ে যাবে কিংবা রোগ নিরাময় হতে বিলম্ব হবে এমনও নয়। এমন অল্প অসুস্থতার অজুহাতে যমিনে বা চেয়ারে বসে নামায পড়লে নামায আদায় হবে না।

৫. যে ব্যক্তি নামাযে কিয়াম তথা দাঁড়াতে সক্ষম। যমিনে সিজদাও করতে পারে। কিন্তু পা ভাঁজ করে তাশাহহুদের সুরতে বসতে পারে না। তবে পা ছড়িয়ে বা চারজানু হয়ে বা এক পা বিছিয়ে আরেক পা উঠিয়ে কিংবা এক পায়ের পাতা বিছিয়ে আরেক পা বের করে অথবা উভয় পা বের করে বা অন্য যে কোনো পদ্ধতিতে যমিনে বসতে পারে এবং যমিনে সিজদাও করতে পারে তার জন্যও চেয়ারে বসে নামায পড়া জায়েয নয়। সে যেভাবে সম্ভব বসেই যমিনে সিজদা করে নামায আদায় করবে এবং কিয়াম ও রুকুও যথানিয়মে আদায় করবে। পুরোপুরি সুন্নত তরিকায় তাশাহহুদের সুরতে বসতে না পারার অজুহাতে তার জন্য চেয়ারে বসে নামায পড়ার কোনো সুযোগ নেই। এমন ব্যক্তি যমিনে সিজদা না করে চেয়ারে বসে ইশারায় সিজদা করলে তার নামায সহীহ হবে না।

৬. যে ব্যক্তি নামাযে কিয়াম তথা দাঁড়িয়ে নামায আদায় করতে সক্ষম নয়, কিন্তু যমিনে বা সমতলে কোনো না কোনো পদ্ধতিতে বসতে পারে এবং যমিনে সিজদাও করতে পারে, তবে চেয়ারে বসে নামায শুরু করলে সিজদা ও কা‘দা (বৈঠক)-এর জন্য যমিনে নামতে সক্ষম নয় তার জন্যও চেয়ারে বসে নামায পড়া জায়েয নয়। এমন ব্যক্তি যেহেতু সমতলে বসে সিজদার ফরয আদায় করতে সক্ষম তাই শুরু থেকেই সে যমিনে বা সমতলে বসে যথানিয়মে সিজদা করে নামায আদায় করবে; নতুবা তার নামায আদায় হবে না।

৭. যে ব্যক্তি নামাযে কিয়াম তথা দাঁড়িয়ে নামায পড়তে সক্ষম, আবার যমিনে বা সমতলে বসতেও পারে এবং যমিনে সিজদাও করতে পারে, কিন্তু নামাযে দাঁড়ানো অবস্থা থেকে বসতে পারে না, তেমনি বসলে আবার দাঁড়াতে পারে না তার জন্যও চেয়ারে বসে পড়া জায়েয নয়। বরং সে পুরো নামায নিচে বসে আদায় করবে, যাতে যথানিয়মে যমিনে সিজদা করতে পারে; নতুবা তার নামায সহীহ হবে না।

নামাযের আংশিক চেয়ারে আদায় করার হুকুম

১. যে ব্যক্তি নামাযে কিয়াম তথা দাঁড়িয়ে নামায পড়তে সক্ষম নয়, কিন্তু যমিনে বা সমতলে কোনো না কোনোভাবে বসতে পারে এবং যমিনে সিজদাও করতে পারে। তার জন্য সিজদা ও কা‘দা (বৈঠক) যমিনে বসে যথানিয়মে আদায় করা জরুরি। এমন ব্যক্তি যদি সিজদার সময় চেয়ারে বসে ইশারায় সিজদা আদায় করে তবে তার নামায সহীহ হবে না; বরং এক্ষেত্রে সে পুরো নামাযই যমিনে বসে আদায় করবে। আর সে যদি এক্ষেত্রে সিজদা ও কা‘দা (বৈঠক) যমিনে বসে যথানিয়মে আদায় করে কিন্তু কিয়াম ও রুকুর সময় চেয়ারে বসে তবে তার নামায ফাসেদ না হলেও যমিনে বসে আদায় করতে সক্ষম হওয়া সত্তে¡ও চেয়ারে বসার কারণে তার নামায মাকরূহ হবে।

আর এমন ব্যক্তি চেয়ারে বসে নামায শুরু করলে সিজদা ও কা‘দা (বৈঠক)-এর জন্য যমিনে নামতে না পারলে তার জন্য কিয়ামের সময় চেয়ারে বসাই নাজায়েয। বরং শুরু থেকেই তার যমিনে বসে নামায পড়া জরুরি; যা একটু আগেই উল্লেখ করা হয়েছে।

২. যে ব্যক্তি কিয়াম করতে সক্ষম এবং দাঁড়ানো থেকে চেয়ারে বসতেও পারে, কিন্তু যমিনে কোনো পদ্ধতিতেই বসতে পারে না এমন ব্যক্তির জন্য বিধান হল, সে যথা নিয়মে দাঁড়িয়ে নামায শুরু করবে। এরপর স্বাভাবিকভাবে রুকু করতে পারলে রুকুও করবে। তারপর অবশিষ্ট নামায চেয়ারে বসে পড়বে। কিন্তু এক্ষেত্রে কিয়াম করতে সক্ষম হওয়া সত্বে ও তার জন্য শুরু থেকেই চেয়ারে বসে নামায পড়া সহীহ নয়।

এখানে উল্লেখ্য যে, যে ব্যক্তি যমিনে সিজদা করতে সক্ষম নয় তার ব্যাপারে হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ মত হল, এমন ব্যক্তির উপর দাঁড়িয়ে নামায আদায় করা জরুরি নয়; বরং সে বসে ইশারায় নামায আদায় করতে পারে।

এ বক্তব্যটি যদিও একেবারে দলীলবিহীন নয়, কিন্তু অনেক মুহাক্কিক ফকীহের দৃষ্টিতে এই মাসআলায় দলীলের বিচারে ফিকহে হানাফীর ঐ বক্তব্য বেশি শক্তিশালী, যা ইমাম আবু হানীফা রাহ.-এর শাগরিদ ইমাম যুফার ইবনে হুযাইল রাহ.-এর মাযহাব। আর এটাই বাকি তিন ইমামের (ইমাম মালেক রাহ., ইমাম শাফেয়ী রাহ. এবং ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রাহ.) মাযহাব। আর তা হল, এমন ব্যক্তি (যে ব্যক্তি যমিনের উপর সিজদা করতে অক্ষম) যদি দাঁড়িয়ে নামায আদায় করতে সক্ষম হয় তাহলে তাকে দাঁড়িয়েই নামায আদায় করতে হবে। আর যেহেতু সে সিজদা করতে অক্ষম তাই সে ইশারায় সিজদা করবে (যদি রুকু করতেও অক্ষম হয় তাহলে রুকুও ইশারায় আদায় করবে)। যমিনে সিজদা করতে অক্ষম হওয়ার কারণে দাঁড়ানোর ফরয ছাড়া যাবে না।

হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম তাঁর একটি ফতোয়াতে এই মাসআলার উপর বিশদ আলোচনা করেছেন এবং ‘ফাতহুল কাদীর’ খ. ১ পৃ. ৪৬০, ‘আননাহরুল ফায়েক খ. ১ পৃ. ৩৩৭ এবং ‘ইলাউস সুনান খ. ৭ পৃ. ২০৩ ইত্যাদির বরাতে দালায়েলের আলোকে এই ‘কওল’ (বক্তব্য)-কেই শক্তিশালী বলেছেন যে, কিয়ামের ফরয আদায় থেকে শুধু ঐ ব্যক্তি ছাড় পাবে, যে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করতে অক্ষম। সিজদা করতে অক্ষম হওয়ার কারণে কিয়াম না করার ছাড় পাবে না। তিনি সেখানে বিশদভাবে ঐ কথারও খন্ডন করেছেন যে, ‘শুধু সিজদার জন্য কিয়াম ফরয করা হয়েছে। তাই সিজদা করতে অক্ষম হলেই কিয়াম জরুরি থাকে না।’ তিনি একাধিক দলীল দ্বারা একথা প্রমাণ করেছেন যে, কিয়াম নামাযের একটি স্বতন্ত্র ফরয; তা শুধু সিজদার জন্য নয়।

এমনকি হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম ঐ ফতোয়ায় একথাও লিখেছেন যে, যে ব্যক্তি দাঁড়িয়ে নামায শুরু করতে পারে, কিন্তু সিজদার জন্য যমিনে বসার পর আবার দাঁড়াতে তার অনেক কষ্ট হয়, এমন ব্যক্তিও কিয়াম (দাঁড়িয়ে নামায পড়া) একেবারে ছাড়বে না। বরং প্রথম রাকাত দাঁড়িয়ে আদায় করবে। এরপর উঠে দাঁড়াতে কষ্ট হওয়ার কারণে বাকি নামায বসে আদায় করবে।

এর সাথে সাথে হযরত দামাত বারাকাতুহুম এ-ও বলেছেন যে, যমিনের উপর সিজদা করতে অক্ষম কোনো মুসল্লী যদি ফিকহে হানাফীর প্রসিদ্ধ মত অনুযায়ী আমল করে এবং পুরা নামায বসে আদায় করে এবং ইশারায় রুকু-সিজদা করে তাহলে তার নামায ফাসেদ হয়েছে বলব না।

(لأن المسألة من الاجتهاديات، و القول المشهور و إن كان مرجوحا من حيث الدليل و لكنه ليس من الزلات المحضة، فله بعض الأدلة أيضا، مذكور في “مختصر اختلاف العلماء” ج ১ ص ৩২৫.)

৩. যে ব্যক্তি কিয়াম ও রুকু করতে সক্ষম এবং সরাসরি যমিনে বা সমতলে কোনো না কোনোভাবে বসতেও পারে, কিন্তু যমিনে সিজদা করতে পারে না, সে তো কিয়াম ও রুকু যথানিয়মেই আদায় করবে। এরপর যমিনে বসে যাবে। ইশারায় সিজদা আদায় করবে এবং তাশাহহুদ যমিনে বসেই আদায় করবে। এমন ব্যক্তি যেহেতু মাটিতে বা সমতলে বসতে পারে তাই তার জন্য যমিনে কা‘দা-এর পরীবর্তে চেয়ারে বসা মাকরূহ তাহরীমী। যা পরিহার করা কর্তব্য।

৪. যে ব্যক্তি নামাযে কিয়াম তথা দাঁড়াতে সক্ষম নয়, কিন্তু যমিনে বা সমতলে কোনো না কোনোভাবে বসতে পারে এবং যমিনে সিজদাও করতে পারে। সে যদি চেয়ারে বসে নামায আদায় করে এবং সিজদার জন্য চেয়ার থেকে নেমে মাটিতে সিজদা আদায় করে তবে এক্ষেত্রে তার সিজদা যথানিয়মে আদায় হলেও কা‘দা অর্থাৎ বৈঠক চেয়ারে আদায় করার কারণে নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে; যা পরিহার করা কর্তব্য।

পুরো নামায যার জন্য চেয়ারে বসে পড়া জায়েয

যে ব্যক্তি নামাযের কিয়াম, রুকু-সিজদা ও কা‘দা (তাশাহহুদের জন্য বসা) কোনোটিই স্বাভাবিকভাবে আদায় করতে সক্ষম নয়; বরং শুধু চেয়ারেই বসতে পারে কেবল এমন অসুস্থ ব্যক্তির জন্য পুরো নামায চেয়ারে বসে আদায় করা জায়েয।

কিন্তু এক্ষেত্রে বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, এই ব্যক্তি যে কিয়াম, রুকু-সিজদা ও কা‘দা (বৈঠক) সবগুলোই যথানিয়মে স্বাভাবিকভাবে আদায় করতে সক্ষম নয় তা বাস্তবসম্মত ও সুপ্রমাণিত হতে হবে। এর জন্য ডাক্তারের পরামর্শের পাশাপাশি কোনো মুফতী সাহেবকে নিজের অবস্থা পুরোপুরি জানিয়ে তার থেকে মাসআলা নিয়ে সে অনুযায়ী আমল করবে। নতুবা নিজে নিজে ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণে কখনো নামায নাও হতে পারে।

মোদ্দাকথা এই যে, যে ব্যক্তি দাঁড়িয়ে নামায আদায় করতে অক্ষম তার জন্য বিকল্প পদ্ধতি হল, যমিনে বসে তা আদায় করা। আর যে রুকু-সিজদা করতে অক্ষম তার জন্য বিকল্প পন্থা হল, ইশারায় রুকু-সিজদা আদায় করা। আর যে ব্যক্তি যমিনে বসতে অক্ষম তার জন্য যমিনে বসে কা‘দা আদায়ের বিকল্প হল চেয়ারে বসা। কেবল প্রথম ও দ্বিতীয় ওযরের কারণে চেয়ারে বসা জায়েয নয়।

চেয়ারে বসে নামাযের ক্ষেত্রে সিজদা আদায়ের পদ্ধতি

যে ব্যক্তি যমিনে সিজদা করতে অক্ষম তার ব্যপারে হুকুম হল, সে ইশারায় সিজদা আদায় করবে। এমন মাযূর ব্যক্তি যদি বাস্তব ওযরেই চেয়ারে বসে নামায আদায় করে তাহলে সেও ইশারায়ই সিজদা করবে। সামনে তখতা বা টেবিল রেখে তাতে সিজদা করবে না। কেননা সিজদার জন্য সামনে টেবিল বা উঁচু বস্তু রাখা এবং তাতে সিজদা করার কোনো বিধান হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। অবশ্য এর দ্বারা যেহেতু ইশারার কাজ হয়ে যায় ফলে নামায আদায় হয়ে যাবে। উল্লেখ্য, ইশারায় সিজদা আদায় করার নিয়ম হল, রুকুর জন্য মাথা যতটুকু ঝোঁকাবে সিজদার জন্য তার চেয়ে একটু বেশি ঝোঁকানো।

আর সিজদার জন্য ইশারা করার সময় হাত হাঁটুতেই রাখবে। কেউ কেউ তখন যমিনে সিজদা করার মত হাত চেহারা বরাবর রাখে। এটি ভুল নিয়ম।

শেষ কথা

সম্মানিত পাঠক! যদি উল্লিখিত মাসআলাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ে থাকেন তাহলে আশা করি এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে থাকবে যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে চেয়ারে বসে নামায আদায় করা একেবারেই নাজায়েয। এসব ক্ষেত্রে নামাযই শুদ্ধ হয় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নামাযের আংশিক চেয়ারে বসে আদায় করলে যদিও নামায ফাসেদ হয় না, কিন্তু তা মাকরূহ। কেবল একটি ক্ষেত্র এমন, যেখানে চেয়ারে বসে নামায আদায় করলে নামায আদায়ও হয়ে যায় এবং মাকরূহও হয় না।

এই বাস্তবতাটি যদি আমরা যথাযথ উপলব্ধি করতে পারি তাহলে এ বিষয়টি বুঝতে আমাদের কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয় যে, বর্তমানে মসজিদগুলোতে চেয়ারের যে ভিড় পরিলক্ষিত হচ্ছে (এবং দিন দিন যা বেড়েই চলেছে) এটা কেবল এজন্যই যে, মাসআলা জানা না থাকার কারণে এমন অনেক মুসল্লীও নামাযে চেয়ার ব্যবহার করে থাকেন, যাদের জন্য নামাযে চেয়ার ব্যবহার জায়েযই নয়। সম্মানিত মুসল্লীবৃন্দ যদি হিম্মত করে শরয়ী ওযর ব্যতীত নামাযে চেয়ার ব্যবহার পরিত্যাগ করেন এবং নামাযে চেয়ার ব্যবহারকে শরয়ী রুখসত (শরীয়ত কর্তৃক অনুমোদিত ছাড়) পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখেন তাহলে মসজিদগুলোতে চেয়ারের এই ভিড় হ্রাস পাবে ইনশাআল্লাহ। অধিকাংশ মসজিদে চেয়ারের কোনো প্রয়োজনও পড়বে না। আর এমনটিই হওয়া চাই, কেননা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যামানায়ও চেয়ারের অস্তিত্ব ছিল; বরং এরও বহু পূর্ব থেকে ছিল। আর প্রথম থেকেই মাযূর ও অসুস্থ মুসল্লী ছিলেন। কিন্তু ইতিহাসে এমন কোনো নজির পাওয়া যায় না যে, মসজিদগুলোতে চেয়ার পাতা থাকত। অথবা মাযূর মুসল্লীগণ চেয়ার নিয়ে এসে তাতে নামায আদায় করতেন। মসজিদে চেয়ার পেতে রাখা এবং চেয়ারে নামায আদায় করার যে প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে তা সম্পূর্ণ নতুন রেওয়াজ। এটাকে নিরুৎসাহিত করাই কাম্য। আর অনুসৃত পন্থার প্রতি মনোনিবেশ করার মাঝেই রয়েছে কল্যাণ।

যেই কঠিন প্রয়োজনে নামাযে চেয়ার ব্যবহারের সুযোগ বের হয়ে আসে সেক্ষেত্রে এ বিষয়টির প্রতিও খেয়াল রাখা চাই যেÑ যদি উঁচু মোড়া, টুল ব্যবহারে কাজ হয়ে যায় তাহলে চেয়ার ব্যবহার করবে না। তেমনিভাবে হাতলবিহীন চেয়ারে যদি কাজ সেরে যায় তাহলে হাতলযুক্ত চেয়ার ব্যবহার থেকে বিরত থাকবে।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সুস্থ জীবন দান করুন। সর্বক্ষেত্রে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, খুলাফায়ে রাশেদীন এবং সাহাবায়ে কেরামের সুন্নত অবলম্বন করার তাওফীক দান করুন। বিদআত থেকে দূরে রাখুন। অন্য ধর্মাবলম্বীদের আচার-সভ্যতা ও রীতি-নীতি থেকে হেফাযত করুন । আমীন।

এক মূখে ২ রকম কথা?!…. হ্যাঁ, যদি কাউকে আল্লাহ প্রসারিত করে থাকেন এবং জীবিকা নির্বাহের অন্য কোনো মাধ্যম থাকে, তাহলে কোনো প্রতিদান ছাড়াই আল্লাহর জন্য এ (কুরআনের) খেদমত করা উত্তম।”

দারুল উলুম দেওবন্দ, ভারত।
https://darulifta-deoband.com/home/ur/the-holy-quran/22631

তালিম #বিনিময় #ফতোয়া #সাদ #পারিশ্রমিক

সারা বিশ্বের সাথীদের মধ্যে (যেখানে আরবের সাথীরা ও আছে) গ্রহণযোগ্যতা পাওয়া “মুন্তাখাব হাদিস” কিতাবের ব্যাপারে দেওবন্দের নতুন রাজনীতি।

2009 সালের 24 মে দারুল উলুম দেওবন্দের ইফতা বিভাগ থেকে প্রকাশ করা হয় যে,

” আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে ঘরে বরকত আনায়নের জন্য প্রতিনিয়ত কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করা এবং ফাজায়েলে আমল, মুন্তাখাব হাদিস এর তালিম করা চাই”।

আবার সেই দারুল উলূম দেওবন্দের ইফতার পক্ষ থেকে বলা হয়,

“মুনতাখাব আহাদিস গ্রন্থে হাদিসসমূহের ব্যাখ্যা নেই। যার ফলে জনসাধারণের মর্ম বুঝতে সমস্যা হবে। এজন্যে ফাজায়েলে আমল তা‘লীম করা জনসাধারণের জন্যে উত্তম হবে।”

এই ফতোয়ার প্রকাশকাল- 29 জানুয়ারি,২০১৯।

আজ থেকে 22 বছর আগে হযরত আবুল হাসান আলী নদভী রহমতুল্লাহি আলাইহি মুন্তাখাব হাদিস এর কিতাব এর ভূমিকা লিখেছিলেন,
” এই (দাওয়াত ও তাবলীগের) মূলনীতি ও উপাদানসমূহ যাহা এই দাওয়াত ও জামাতের জন্য জরুরী সাব্যস্ত করা হয়েছে,কুরআন ও হাদিস হতে সংগৃহীত এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও দ্বীনের হেফাজতের ক্ষেত্রে একজন প্রহরী ও নিরাপত্তারক্ষীর মর্যাদা রাখে। এই সবগুলি উৎস আল্লাহ তাআলার কিতাব ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ ও হাদিস।

একটি স্বতন্ত্র ও আলাদা কিতাবে এই সকল আয়াত, হাদিস ও উৎস সমূহ কে একত্রিত করার প্রয়োজন ছিল। আল্লাহতালার শোকর যে, এই দাওয়াত ও তাবলীগের (প্রথম দায়ী বা আহ্বায়ক হযরত মাওলানা মোঃ ইলিয়াস সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি এর সুযোগ্য উত্তরাধিকারী) দ্বিতীয় দায়ী বা আহ্বায়ক হযরত মাওলানা মোঃ ইউসুফ সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি এর দৃষ্টি হাদিসের কিতাব সমূহে অত্যন্ত গভীর ছিল। তিনি এই সকল মূলনীতি ও নিয়মাবলী ও সতর্কতামূলক বিষয়াবলীর উৎস গুলি কে একটি কিতাবে একত্রিত করে দিয়েছেন। আর পূর্ণাঙ্গ পরিপূর্ণভাবে এই ব্যাপারটি আঞ্জাম দিয়েছেন।”

যেখানে হযরত মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী রহমতুল্লাহি আলাইহি মুন্তাখাব হাদিস এর ব্যাপারে আল্লাহ তাআলার কাছে শোকর আদায় করেছেন এবং ইউসুফ সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি এর ইলম এর প্রশংসা করেছেন। আর সেখানে বর্তমান দারুল উলুম দেওবন্দের পক্ষ থেকে এই ধরনের বিতর্কিত ফতোয়া প্রকাশ করা, তাদের এলমের দৈন্যতার পরিচয় বহন করে এবং আকাবিরদের ব্যাপারে তাদের বেয়াদবি প্রকাশ করে। পৃথিবীতে দারুল উলুম দেওবন্দের যে গ্রহণযোগ্যতা ছিল, তা আস্তে আস্তে মানুষের মন থেকে নষ্ট হয়ে যাওয়ার জন্য এই ধরনের ফতোয়া ই যথেষ্ট।

এবার বুঝেন তাহলে, দারুল উলুম দেওবন্দের রাজনীতি কেমন করে হয়। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এই সমস্ত রাজনীতি মার্কা ফতোয়া থেকে হেফাজত করে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এবং সাহাবা আজমাইন এর সীরাতের উপর অটল থাকার তৌফিক দান করুন আমিন।

জন্ম_নিবন্ধনজন্ম নিবন্ধন করার জন্য আমাদের ইউপি সদস্যের পেছনে ঘুরতে ঘুরতে পায়ের সেন্ডেল ক্ষয়হয়।এখন আর ওনাদের পেছনে ঘুরতে হবে না, ভাবনা নয় সত্যি,দেশে এখন ডিজিটাল, ইউ‌নিয়ন সেন্টার, অনলাইন সার্ভিস, চালু করা হয়েছে।দোকানে বা নিজ মোবাইলে ঘরে বসে আপনি আপনারনিজের বা শিশুর জন্ম নিবন্ধন করতে পারবেন। আর নয় ঘুরাঘুরি সেবা পাবে নিজ পরিবার, নিচের লিংক গুলোতে ক্লিক করুন, আপনার প্রয়োজনিয় সেবা নিন,★নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদনhttp://bdris.gov.bd/br/application,★জন্ম নিবন্ধন তথ্য সংশোধন আবেদনhttp://bdris.gov.bd/br/correction,★জন্ম নিবন্ধন তথ্য অনুসন্ধানhttp://bdris.gov.bd/br/search](http://bdris.gov.bd/br/search…★জন্ম নিবন্ধন আবেদনের বর্তমান অবস্থাhttp://bdris.gov.bd/br/application/status,★জন্ম নিবন্ধন আবেদন পত্র প্রিন্টhttp://bdris.gov.bd/application/print,★জন্ম নিবন্ধন সনদ পুনঃ মুদ্রনhttp://bdris.gov.bd/br/reprint/add,

Design a site like this with WordPress.com
Get started